Ads

আইআইটির মুসলিম ছাত্র হত্যার প্রেক্ষিতে যা হচ্ছে ভারতে

।। আহমদ হাসান ইমরান ।।

আইআইটি খড়গপুরে নিহত ফায়জান আহমেদকে যে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে, দ্বিতীয় ফরেন্সিক রিপোর্টটি সামনে আসার পর তা এখন জলের মতো পরিষ্কার। খ্যাতনামা ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ ড. এ কে গুপ্ত ফায়জানের লাশ কবর থেকে তুলে কলকাতায় এনে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করার পর যে রিপোর্ট তৈরি করেছেন, তার নির্যাস বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

আশ্চর্যের কথা, যাঁরা সমানে বলে যাচ্ছিলেন ফায়জান খড়গপুর আইআইটি হোস্টেলে ‘আত্মহত্যা’ করেছে, তাঁরা এখন চুপ। এই দ্বিতীয় ফরেন্সিক রিপোর্টটি ভুল, এ কথা বলার মতো সাহস এখনও পর্যন্ত কারও হয়নি। দ্বিতীয়বার লাশ ময়নাতদন্ত করার পর ফরেন্সিক রিপোর্টে স্পষ্ট বলা হয়েছে,

ফায়জানের প্রাণ-বায়ু বের করার জন্য আইআইটি খড়গপুরের এক হোস্টেলের রুমে তাকে বার বার আঘাত করা হয়েছে। বার বার ছুরিকাঘাত করা হয়েছে এবং পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে তার ঘাড়ে গুলি চালানো হয়েছে। তার মাথায় ধারালো অস্ত্র দ্বারাও আঘাত করা হয়েছে।

আরও পড়ুন-

ভারতের বিস্মৃত স্বাধীনতা সংগ্রামী মাওলানা আবুল কালাম আজাদ

ফায়জানের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্টের সংবাদ এখন জাতীয়স্তরের পত্রিকাসমূহ এবং টেলিভিশনেও প্রচারিত হয়েছে। সকলেই বুঝতে পারছেন, উজনি অসম বা আপার অসম থেকে আসা মেধাবী এই অহমিয়া মুসলিম ছাত্রটিকে কে বা কারা নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। ফায়জান ছিল এক শান্ত, আত্মমুখী ছাত্র। তার সঙ্গে কারও এমন শত্রুতা থাকার কথা নয় যে তাকে হত্যা করার জন্য হোস্টেলে ব¨ুক, রিভলভার, ধারালো ছুরি এগুলি নিয়ে আসা হবে। ফায়জানের মা রেহানা আহমেদ সঠিকভাবেই প্রশ্ন তুলেছেন, আইআইটিতে অধ্যয়নরত গবেষক পড়ুয়ারা হোস্টেলের মধ্যে কী করে বলুক, রিভলভার, ধারালো ছুরি-তলোয়ারের জোগান পেল? মেধাবী পড়ুয়ারা তো আইআইটিতে পড়াশোনা করতে আসে। তারা কোনও কারণে আগ্নেয়াস্ত্র, ছুরি নিয়ে হত্যালীলায় মেতে উঠল? কী ছিল তাদের প্ররোচনা?

ভারতের খড়গপুর আইআইটি

সবথেকে দুঃখ এবং রহস্য হল, কেন খড়গপুরের পুলিশ, আইআইটি কর্তৃপক্ষ এবং দেহ ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা একাট্টা হয়ে প্রমাণ করতে মরিয়া হয়ে উঠলেন যে, এটা কোনও খুন নয়। বরং এটা ‘স্পষ্ট আত্মহত্যার’ ঘটনা! তিনসুকিয়া থেকে এসে ছেলের লাশ দেখে ফায়জানের মা প্রথম থেকে বলে যাচ্ছিলেন, যেভাবে রক্তের স্রোত তিনি দেখেছেন এবং কালো হয়ে যাওয়া ছেলের মুখ প্রভৃতি দেখে তাঁর মনে হয়েছে এটা স্পষ্ট খুন। কারণ, তাঁর ছেলে তাঁর সঙ্গে ফোনে মারা যাওয়ার আগের দিনও যেসব কথাবার্তা বলেছে তাতে মনে হয়নি সে বিষণ্ণ ও আত্মহত্যার মতো ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে।

আরও পড়ুন-

মুসলমানের রক্তে লেখা ভারতের স্বাধীনতা

তবে ফায়জান আইআইটি কর্তৃপক্ষের কাছে কয়েকবার অভিযোগ করেছিল যে, তাকে র‌্যাগিং করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত ই-মেলও এখন পাওয়া গেছে। কিন্তু আইআইটি কর্তৃপক্ষ ফায়জানের অভিযোগ পেয়েও নীরব থাকাই বাঞ্ছনীয় মনে করেছেন। তবে একটি কথা স্বীকার করতেই হবে, পশ্চিম মেদিনীপুরের এসপি দীনেশ কুমার তাঁর রিপোর্টে উল্লেখ করেছিলেন, ফায়জানের লাশ রক্তের বন্যার মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল। পুলিশের কাছ থেকে শুধু এই স্বীকারোক্তিটিই সঠিকভাবে পাওয়া যায়।
ফায়জানের মায়ের দ্বিতীয় প্রশ্নটিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রেহানা আহমেদের প্রশ্ন হল,

আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না, কেন আমার ২৩ বছরের ছেলের নৃশংস হত্যাকে লুকানোর জন্য পুলিশ-প্রশাসন, আইআইটি কর্তৃপক্ষ এবং প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা একসঙ্গে জোট বাঁধলেন? সব কিছু দেখেও কীসের জন্য তাঁরা সমানে বলতে থাকলেন ‘এ হচ্ছে আত্মহত্যা’?

ফায়জানের মা রেহেনে আহমেদের হাতে নিহত ছেলের ছবি

আর একটি বিষয়ও নজর-আন্দাজ করা যায় না। আর তা হল কলকাতা হাইকোর্ট স্পষ্ট তদন্ত করার জন্য যে সিট বা স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম তৈরি করে তাদের নতুন করে তদন্তের আদেশ দেয়, তারাও কেসটি নিয়ে গড়িমসি শুরু করে। ২০২৩ সালের ১৪ জুন সিট-এর উপর তদন্ত ভার ন্যস্ত করে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জাস্টিস মান্থা। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় সিট এই মামলাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করে ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে এবং তারা এই গুরুত্বপূর্ণ মামলাটির তদন্ত কাজ চালিয়ে যায় খুবই মন্থর গতিতে। এ জন্য কলকাতা হাইকোর্ট পরে সিট ও তার অফিসারদের ভর্ৎসনা করে। তবে উল্লেখযোগ্য হল, হাইকোর্ট তার আদেশে বলেছিল, সিট যেন খুনের অ্যাঙ্গেলটিও ভালোভাবে খতিয়ে দেখে। কারণ, এই ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা’ বলে চালানোর চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু সিট আত্মহত্যার থিয়োরিকেই জোরদার করতে তাদের তদন্ত চালিয়ে যায়!

আরও পড়ুন-

ভারত বিভাগের দাবি রাজনৈতিকভাবে ভ্রান্ত ।। মাঃ আজাদ

ইতিমধ্যে যে বেঞ্চ এই মামলাটি শুনছিল পর পর দু’বার তার বিচারক পালটে গেছে। সবশেষে তৃতীয়বারের মতো মামলাটি এসেছে বিচারপতি অমৃতা সিনহার হাতে। তাঁর এজলাসে ১৩ জুন, ২০২৪ এই মামলাটি ওঠার কথা ছিল। কিন্তু দেখা যায়, সেদিন জাস্টিস অমৃত সিনহার এজলাসে পেশ হবে বলে মামলার যে তালিকা তৈরি হয়, তাতে ফায়জানের মামলাটি নথিভুক্ত ছিল না।

এ দিকে নতুন এক ডেভালপমেন্টও হয়েছে। অসমের মুসলিম-বিরোধী মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ১৭ জুন, ২০২৪ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এক চিঠি লিখেছেন, তাতে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘আদরনীয়া দিদি’ সম্বোধন করে লিখেছেন যে, দ্বিতীয় ফরেন্সিক রিপোর্টটির পর মনে হচ্ছে যাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করছেন তাঁদের পক্ষে ইনসাফ করা সম্ভব হবে না। তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন ন্যায়বিচারের স্বার্থে এই মামলাটিকে যেন সিবিআই-এর হাতে সমর্পণ করা হয়। তাহলে হয়তো ফায়জান হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হতে পারে।

ছবিতে ভারতীয় ফায়জান আহমেদ এবং বাংলাদেশী আবরার ফাহাদ; যারা উভয়েই ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ।  ফায়জান ও আবরারের দেশ আলাদা , ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা; কিন্তু হত্যার ধরণ যেন একই, একই সূত্রে যেন গাঁথা !!! 

এ দিকে আরও কয়েকটি সংগঠন দাবি তুলেছে, এই মামলাটি যেন অবশ্যই সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ দিকে সিট-এর প্রধান কে. জয়রামন সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা আমাদের তদন্ত রিপোর্ট হাইকোর্টে জমা দিয়েছি। তবে আমরা ফায়জানকে হত্যা করা হয়েছে, এই মর্মে কোনও সূত্রই পাইনি।’

তাই সকলে বলছেন, শেষ প্রচেষ্টা হিসেবে হত্যারহস্য উদ্ঘাটনের জন্য সিবিআই-এর হাতে মামলাটি তুলে দেওয়া উচিত।

লেখকঃ পশ্চিমবঙ্গ মাইনরিটি কমিশনের চেয়ারম্যান ,কলাম লেখক এবং সম্পাদক, পুবের কলম (ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম কমিউনিটির সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা)

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে লেখক আহমাদ হাসান ইমরান

আরও পড়ুন