Ads

ইনফ্লুয়েঞ্জার আত্মকথন

।। নূরুন্নাহার নীরু ।।

মাঝে মাঝেই ইচ্ছে হয় পৃথিবীর মানুষগুলোর ঘাড় মটকে দেই৷ তেইড়া ঘাড়টা একটু সোজা করে দেই৷ তাইতো বাতাসে ভর করে নেমে আসি মর্ত্যে৷ ঐ জন্যই মানুষ আমাকে নাম দিয়েছে বাতাসবাহিত জীবাণু৷ হ্যাঁ আমি ইনফ্লুয়েঞ্জা বলছি৷ অনেকে সংক্ষেপে ‘ফ্লু’ও বলে থাকে৷

আমি একা নই৷ আমার বেশকিছু সহচরী আছে যারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামে পৃথিবীতে নেমে এসেছে আর কাবু করে ছেড়েছে বেয়াড়া মানুষগুলোকে৷ এই যেমনঃ “১৯১৮—১৯১৯ সাল অব্দি অবস্থানকৃত “স্প্যানিশ ফ্লু'” যা বিশ্বের ২৫ মিলিয়ন মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল একবারে৷ আরো আছে বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু ইত্যাদি৷

আমার এসব সহচরীরা মূলতঃ মহামারীর আকারেই এসে থাকে৷ আমি যদিও ওদের মত অতটা নিষ্ঠুর হতে পারি না তবু বিজ্ঞানীরা আমাকে  এ,বি,সি,ডি এই চারটি টাইপে বিভক্ত করে আমার ধ্যান-জ্ঞান-উচ্চতা নির্নয় করতে সচেষ্ট রয়েছে৷

ওরা বলেঃ ইংরেজী ভাষায় আমার নামটা আবিস্কৃত হয় ১৭০৩ সালে৷  আমার আক্রমণে নাকি প্রতিবছর  ২লক্ষ ৯০ হাজার থেকে ৬ লক্ষ ৫০  হাজার মানুষ মারা যায়৷ ঃ আরো বলে আমার চারটি ধরণের মধ্যে এ, বি, সি মানুষের দেহে দেখা মিললেও ডি টাইপটা পশুপাখীর শরীরে দেখা গেছে৷

মানুষ মনে করে আমার আক্রমণ শুধু শিশু আর বয়স্কদের মাঝেই৷ আরে না!না! যখন খুশী হয় আমার খেয়াল চাপে কী জোয়ান তাগড়া আর কী ই বা নিটোল রমনী—কোন ভেদ নেই৷ এ আমার ইচ্ছা এ আমার স্বাধীনতা৷ আমার এ ইচ্ছা আকাঙ্খা নিয়ে বিজ্ঞানীরা কতকিছুই না বলে তবু বলে না, “সব ক্ষমতার মালিক আল্লাহ! যিনি আমারও প্রভূ তাঁরও প্রভূ৷”  তবে আমি ভয় করি আমার প্রভূকে৷ তাঁর হুকুম ছাড়া আমি কারো উপড় চড়াও হই না এমন কি একমূহূর্ত বেশীও  তাকে নাড়িয়ে ও বেড়াই না৷

আরও পড়ুন- এখনো বিজয় আসেনি ।। ১ম পর্ব

যদিও আমার খুব আনন্দ— একবার মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারলে তাকে একটু ঝাকানাকা খাইয়ে দেয়া৷ এ জন্য আমি আমার সব শক্তি ঢেলে দিয়ে —আমার বাহিনীকে নিযুক্ত করে দেই যার যার দায়িত্ব পালনে৷ এই যেমন কেউ এসে প্রথমেই গলাটা চিপে ধরবে, কেউ মাথায় উঠে বসে ঘুরঘুরিয়ে নাঁচাবে, কেউ সারা শরীর দলিত মথিত করতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়বে৷ পেটটার মধ্যে উথাল পাতাল ঢেউ তুলে কখনো তা পিচকিরী হয়েও বেরিয়ে যেতে চাইবে,  কেউ ফুঁক দিয়ে দিয়ে  তাপমাত্রা বাড়িয়ে শরীরটাকে পৌঁছে দেবে  হাবিয়ার দ্বোরে৷  মানুষ যেন একটু হলেও অনুভব করতে পারে হাবিয়া কী? এরই মধ্যে আমার শব্দ সৈনিকরাও নেমে পড়বে যার যার হাতিয়ার নিয়ে ৷ ওরা গলা থেকে বুক পর্যন্ত এমন লুটোপুটি খেলবে যে কেউ খক খক শব্দে, কেউ চিঁউ চিঁউ শব্দে কিংবা কেউবা শ্বাসপ্রশ্বাসের উঠানামার সাথে জোর ধাক্কায় দোল খেতে খেতে নাচবে৷ রোগী একসময় বুঝবে “কত ধানে কত চাল৷” বুকের ব্যথায় পিঠের ব্যথায় সর্বাঙ্গের অস্থিমজ্জা এক হতে থাকবে   যদি না তার মুখ দিয়ে সর্বশক্তিমানের  স্মরণ ঘটে৷ এ সব কিছু মিলিয়েই আমার নর্তন কূর্দনে আমি বুদ হব কিছুদিন৷ এটা আমার রুটিন, এটা আমার ধারা৷

তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা আমাকে  এ ধারা মতে চলতে দিতেও  অনীহা৷ তারা আমাকে এবং আমার টাইপগুলোকে খতম করতে উঠে পড়ে লেগে যায়’;   নানা রকম পরীক্ষানিরীক্ষা সহ এমন এমন ঔষধ সেবনে লেগে যায় আমার বাহিনী তখন কিছুটা দমে আসতে বাধ্য হয়৷ তবু এ ক’দিনের সখ্যতা কি ছাড়া যায়? তাই আমার শব্দ বাহিনীরা শেষ সময় পর্যন্ত কত কিইনা আলাপন জুড়িয়ে দেয়—হায়! মানুষ যদি বুঝতো! সে শুধু শুনে ঐ চিঁউ চিঁউ শব্দ —আর বলে  বুকের মাঝে মুরগী ছানা ডাকছে৷ ওরে সবজান্তা মানুষ! তুই কত অক্ষম!

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা সাধারণত বছরের ঠান্ডা মাসগুলিতে বেশি হয়। কাশি এবং হাঁচির ফলে সংক্রামিত ফোঁটা শ্বাস নেওয়ার মতো উপায়ে শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে  ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে প্রেরণ করা হয়। যেহেতু আমার ভাইরাসের কণাগুলো শরীরে প্রবেশ করে, তারা বেছে বেছে সিলিয়েটেড এপিথেলিয়াল কোষগুলিকে আক্রমণ করে এবং ধ্বংস করে যা উপরের শ্বাস নালীর, ব্রঙ্কিয়াল টিউব এবং শ্বাসনালীতে থাকে । রোগের ইনকিউবেশন পিরিয়ড হল এক থেকে দুই দিন, এর পরে লক্ষণগুলির সূচনা হয় আকস্মিক এবং স্বতন্ত্র ঠাণ্ডা, ক্লান্তি এবং পেশীতে ব্যথা সহ। তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে 38-40 °C (101-104 °F) হয়ে যায়। এতো গেল চিকীৎসাবিজ্ঞানীদের ভাষ্য৷

আরও পড়ুন- বহুবিবাহের প্রচারণা ও কুরআনের নির্দেশ ।। ১ম পর্ব

আসলেই কী তাই? আমারতো ইচ্ছে হলেই প্রচন্ড গরমেও আমি নেমে পড়তে পারি৷ ঐ যে বললাম, আল্লাহর হুকুম৷ যে কথাটা বিজ্ঞানীরা বলতে চায় না৷ তারা শুধু তাদের থিউরিই গেয়ে যায়৷ তাইতো ইদানীং আমি তাদের লিখিত সব নিয়মকানুনের বাইরে গিয়ে অলিখিত কর্মতৎপরতায় ও মেতে উঠছি প্রায়শঃই৷ তবু যদি বেয়াড়াগুলোর টনক নড়তো!

ঋতু পরিবর্তন বা মৌসুমী অসুখ বলে ধরে নিলেও আমি অনেক সময়ই ভাইরাল সংক্রমণ  হয়ে দাঁড়াই৷ আর প্রতিনীয়তঃই রূপ পাল্টাই৷ এ সময় ওরা আমাকে বলে “মিউটেশন৷”

আর যা ই বলুক আর যেভাবেই বলুক আমাকে বধ করার জন্য ওদের কতই না প্রচেষ্টা৷ ১৯৯০ এর দশকের শেষের দিকে চালু করা হয়েছিল বেশকিছু ঔষধ যা আমার ‘এ এবং বি’ উভয় ভাইরাসকে বাধা দিতে সচেষ্ট৷ তবে কি যারা নিয়ম মেনে শৃঙ্খলা রক্ষা করে চলে আমি পারত পক্ষে তাদেরে অবশেষে ছেড়েই দেই এই যেমনঃ

১/পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া,

২/ প্রচুর তরল খাবার  ও পানীয় সেবন,

৩/ঠান্ডা আবহাওয়া বর্জন,

৪/শুষ্ক ও উষ্ণতায় নিজকে আটকে রাখা,

৫/যথাযথ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা,

৬/যেখানে সেখানে কফ-থুথু না ফেলা,

৭/আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার্য বস্তুতাদি সযত্নে অন্যের সংস্পর্শ থেকে সরিয়ে রাখা,

৮/ এমন কি বছরে একবার ফ্লুর টীকা গ্রহণ করা৷

আসলে আল্লাহ সুবহানুতা’লা স্বভাবের ধর্মে বিশ্বাসী৷ যারা এ নিয়মগুলো মেনে স্বভাবকে সুন্দর রাখে—কেন অযথাই তাদেরে আমি নাজেহাল করবো? আমার স্রষ্টা তা পছন্দ করেন না৷

তাই ছেলে-বুড়ো-শিশু সবাইকে বলছিঃ এসো নিয়মের মাঝে চলো৷ অতিরিক্ত ঠান্ডা পানীয়, ফ্রিজের খাবার এমন কী আইসক্রীমও খেয়ো না সে তা যতই গরম পড়ুক৷ আর ঠান্ডার সময়? তখনো মেনে চলবে স্বাস্থ্যবিধি৷ তাহলেইতো আমি আর ভর করি না তোমাদের উপর—তোমরাও বেঁচে যাবে মহান রবের কৃপামতে!

লেখকঃ গল্পকার ও প্রাবন্ধিক

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সমাজ,পরিবার ও আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা ও আর্টিকেল পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। প্রিয় লেখক! আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; প্রিয় লেখক ও পাঠক আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম এ যুক্ত হয়ে আমাদের সাথেই থাকুন । আসুন সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

আরও পড়ুন