Ads

উন্নত বিশ্বে গবেষণার জন্যে প্রস্তুতি নেওয়া কেন উচিত?

।। ড. মোহাঃ ইয়ামিন হোসেন ।।

বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগ এবং প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারের মধ্যে একজন এমএসসি বা এমএ পাস করা ছাত্রের জন্য ফেলোশিপ নিয়ে উন্নত বিশ্বে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের প্রস্তুতির গুরুত্ব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই গুরুত্ব বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা যায়:

১। উচ্চমানের শিক্ষা ও গবেষণা সুবিধা

উন্নত দেশগুলির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান ও গবেষণার সুযোগ অনেক বেশি। আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত গবেষণা ল্যাব, এবং অভিজ্ঞ অধ্যাপকদের তত্ত্বাবধানে গবেষণার সুযোগ ছাত্রদের জ্ঞানের গভীরতা ও দক্ষতা বাড়ায়। এ ধরনের পরিবেশে কাজ করার সুযোগ গবেষকদের জ্ঞান ও সৃজনশীলতাকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়।

২।  কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি

উন্নত বিশ্বে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করলে আন্তর্জাতিক মানের সার্টিফিকেট ও অভিজ্ঞতা অর্জন হয় যা বিশ্ববাজারে কর্মসংস্থানের সুযোগকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে। উচ্চশিক্ষিত এবং গবেষণা অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রার্থীরা দেশি-বিদেশি কর্পোরেশন, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং একাডেমিক ইন্সটিটিউটগুলোতে উচ্চ পদে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকেন।

৩। ব্যক্তিগত ও পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি

উন্নত বিশ্বে পড়াশোনা ও গবেষণা করতে গিয়ে ছাত্রদের পেশাগত এবং ব্যক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, নতুন ভাষা শেখা, আন্তর্জাতিক গবেষণা সম্প্রদায়ের সাথে নেটওয়ার্কিং, এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করার জন্য উদ্ভাবনী চিন্তা করার সুযোগ থাকে। এসব অভিজ্ঞতা ছাত্রদের ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করে।

ভাল ক্যারিয়ার গঠনে করণীয়

৪। দেশে গবেষণা উন্নয়নে ভূমিকা

উন্নত বিশ্ব থেকে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করা ছাত্ররা দেশে ফিরে এলে তাদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান দেশীয় শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তারা নতুন গবেষণা উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেন, উন্নত গবেষণা পদ্ধতি প্রবর্তন করতে পারেন এবং নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জন্য মেন্টর হিসেবে কাজ করতে পারেন।

৫।  ফেলোশিপের আর্থিক সুবিধা

ফেলোশিপ পাওয়া মানে শিক্ষার্থীকে অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তামুক্ত করে গবেষণায় মনোনিবেশ করার সুযোগ দেয়া। উন্নত দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের টিউশন ফি ছাড়াও গবেষণার জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। ফলে ছাত্রদের অর্থনৈতিক চাপ কমে এবং তারা গবেষণায় সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করতে পারেন।

৬। প্রাসঙ্গিক নেটওয়ার্ক এবং সংযোগ

উন্নত বিশ্বে পড়াশোনা ও গবেষণা করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক গবেষণা সম্প্রদায়ের সাথে সংযোগ স্থাপন করা যায়। এসব নেটওয়ার্ক ভবিষ্যতে যৌথ গবেষণা প্রকল্প, পেশাগত সহযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজের কাজ প্রদর্শনের সুযোগ তৈরি করে।

৭। নেতৃত্বের ক্ষমতা বৃদ্ধি

উন্নত বিশ্বের কঠিন গবেষণা পরিবেশে কাজ করার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর নেতৃত্বের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের অভিজ্ঞতা তাকে ভবিষ্যতে গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা এবং বিভিন্ন একাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে দক্ষ করে তোলে।

বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় আগ্রহীদের জন্য করণীয়

৮।  বৈশ্বিক সমস্যার সমাধান

উন্নত বিশ্বে গবেষণা করার মাধ্যমে একজন পিএইচডি শিক্ষার্থী বৈশ্বিক সমস্যা, যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, স্বাস্থ্য সংকট, এবং প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জগুলোর উপর গবেষণা করতে পারে এবং সমাধান বের করতে পারে। এই ধরনের গবেষণা দেশের সমস্যার সমাধানেও কার্যকর হতে পারে।

৯। দেশের উন্নয়নে অবদান রাখা

উন্নত বিশ্বে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দেশে প্রয়োগ করে একজন পিএইচডি ডিগ্রীধারী শিক্ষার্থী দেশের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারে। তারা গবেষণা প্রকল্প, প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং শিক্ষা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে সহায়তা করে।

১০। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতি

উন্নত বিশ্বে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে একজন শিক্ষার্থী আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হতে পারে। পাশাপাশি তারা পরিবারের ও সমাজের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে। তাদের উচ্চ মানের শিক্ষাগত যোগ্যতা পরিবার ও সমাজের অন্যান্য সদস্যদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করতে পারে।

বিদেশে এমএস বা পিএইচডির জন্য এসওপি লেখার নিয়ম

পরিশেষে,বাংলাদেশের কর্মসংস্থানের অভাবের প্রেক্ষাপটে একজন এমএসসি বা এমএ পাস করা ছাত্রের জন্য উন্নত বিশ্বে ফেলোশিপ নিয়ে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের প্রস্তুতি নেয়া একটি যুগোপযোগী ও ফলপ্রসূ পদক্ষেপ হতে পারে। এটি শুধু ব্যক্তিগত এবং পেশাগত উন্নতির জন্যই নয়, বরং দেশের শিক্ষা এবং গবেষণার মান উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

আসুন নিজেকে প্রস্তুতি নিয়ে উন্নত বিশ্বে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের চেষ্টায় নিয়োজিত করি।মহান আল্লাহ দয়া করে আমাদেরকে বড় বড় স্কলারশিপ নিয়ে গবেষণা করে বিশ্বের টেকসই উন্নয়নে অবদান রাখার তৌফিক দান করুন। আমিন ইয়া রব্বুল আলামীন!

লেখকঃ প্রাবন্ধিক এবং অধ্যাপক, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে লেখক  মোঃ ইয়ামিন হোসেন 

আরও পড়ুন