Ads

কোরআন ও হাদিসের আলোকে গবেষণার গুরুত্ব

।। ড. মোহাঃ ইয়ামিন হোসেন ।।

ইসলামে গবেষণা ও জ্ঞান অর্জনের গুরুত্ব অত্যন্ত উঁচু। আল-কোরআন ও হাদিসে এর বহু উদাহরণ পাওয়া যায় যা মুসলিমদের জন্য গবেষণা ও জ্ঞান অনুসন্ধানের পথে এগিয়ে যেতে প্রেরণা দেয়। এখানে আমরা কোরআন ও হাদিসের আলোকে গবেষণার গুরুত্ব নিয়ে আজকে আলোচনা করছি, তবে এটাই সব নয়, আরো তথ্য আছে যেগুলো আমার জানা নেই। সময় থাকলে পড়বেন প্লিজ, গবেষণার প্রতি ভালোবাসা বেড়ে যাবে, আসলে আমাদের গবেষণা করতে হবে। কারণ গবেষণা ছাড়া দেশ ও জাতির টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়।

আসুন, আল-কোরআনের আলোকে গবেষণার গুরুত্ব নিয়ে একটু জানি:

১। পড়ার নির্দেশ

কোরআনের প্রথম অবতীর্ণ আয়াতগুলোতে পড়ার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে:

“পড়ো, তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা আলাক: ১)

“পড়ো, তোমার প্রভু মহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।” (সূরা আলাক: ৩-৪)

এই আয়াতগুলোতে জ্ঞান অর্জন ও গবেষণার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

২। বিশ্বাসীদের উপর চিন্তা-ভাবনা করার নির্দেশ

“তারা কি উটের প্রতি লক্ষ্য করে না কিভাবে তা সৃষ্টি করা হয়েছে?” (সূরা গাশিয়া: ১৭)

এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে তাঁর সৃষ্টির গভীরতা ও বিস্ময় সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করতে আহ্বান জানিয়েছেন। এটি গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশ করে।

৩। বিশ্বের রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য গবেষণা

“তোমরা কি তাদের উপরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করো না, কিভাবে আমি মেঘকে সঞ্চালন করি, তারপর তাকে একত্রিত করি এবং এরপর তা গর্জন করতে থাকে?” (সূরা নূর: ৪৩)

এই আয়াতে প্রাকৃতিক ঘটনাবলী নিয়ে গবেষণার প্রয়োজনীয়তার প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন-বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় আগ্রহীদের জন্য করণীয়

৪। আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টির মধ্যে চিন্তাশীল হওয়া

“নিশ্চয় আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের পরিবর্তনগুলিতে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।” (সূরা আলে ইমরান: ১৯০)

আল্লাহ তাআলা এখানে মানুষকে আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টির রহস্য অনুসন্ধানের দিকে ইঙ্গিত করেছেন।

হাদিসের আলোকে গবেষণার গুরুত্ব 

১। জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব

“জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম পুরুষ ও নারীর জন্য ফরজ।” (ইবন মাজাহ)

এই হাদিসটি স্পষ্টভাবে জ্ঞানার্জনের বাধ্যতামূলকতা নির্দেশ করে।

২। গবেষণার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভ

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণে রওয়ানা হয়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।” (মুসলিম)

এই হাদিসে জ্ঞান অনুসন্ধানের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

৩। গবেষণা ও চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমে ইমানের বৃদ্ধি

“যে ব্যক্তি নিজেকে জানে, সে তার রবকেও জানে।” (তিরমিজি)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, নিজস্ব চিন্তা ও গবেষণার মাধ্যমে আল্লাহর সত্তা সম্পর্কে গভীর উপলব্ধি অর্জন করা সম্ভব।

৪। গবেষণার মাধ্যমে উন্নতি

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “যে দুটি দিনের মধ্যে সমান অবস্থায় থাকে, সে ক্ষতিগ্রস্ত।” (বায়হাকি)

এই হাদিসে ব্যক্তিগত উন্নতির প্রয়োজনীয়তা এবং এর জন্য গবেষণার ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।

ইসলামের প্রথম যুগের গবেষণা ও শিক্ষার উদাহরণ

১. ইসলামের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়

ইসলামের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হয় ‘বায়তুল হিকমা’ (জ্ঞানগৃহ)। এটি বাগদাদে অবস্থিত ছিল এবং এখানে মুসলিম ও অমুসলিম বিজ্ঞানী, গবেষক এবং দার্শনিকগণ একত্রিত হয়ে গবেষণা করতেন।

২। ইবনে সিনা ও তাঁর গবেষণা

ইবনে সিনা (আভিসেনা) ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ মুসলিম চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী। তাঁর রচিত ‘কানুন ফি আত-তিব্ব’ (The Canon of Medicine) বহু শতাব্দী ধরে চিকিৎসাশাস্ত্রে প্রধান পাঠ্যপুস্তক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।

৩। আল-খাওয়ারিজমি ও তাঁর কাজ

আল-খাওয়ারিজমি ছিলেন একজন বিখ্যাত মুসলিম গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তাঁর লেখা ‘কিতাব আল-জাবর ওয়াল মুকাবিলা’ (The Compendious Book on Calculation by Completion and Balancing) আধুনিক বীজগণিতের ভিত্তি স্থাপন করেছে।

৪। ইবনে বতুতা ও তাঁর ভ্রমণ

ইবনে বতুতা ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ মুসলিম পরিব্রাজক ও ভূগোলবিদ। তাঁর লেখা ‘রিহলা’ (The Travels) মধ্যযুগীয় বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক এবং সামাজিক বিবরণ প্রদান করে।

সমসাময়িক সময়ে গবেষণার গুরুত্ব 

১। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মুসলিমদের অবদান

ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায়, মুসলিম বিজ্ঞানীরা প্রাচীনকালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ব্যাপক অবদান রেখেছিলেন। এই ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখতে সমসাময়িক মুসলিমদেরও গবেষণার প্রতি মনোযোগী হতে হবে।

২। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গবেষণা

বর্তমান যুগে গবেষণা ও উদ্ভাবন একটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। মুসলিম বিশ্বে গবেষণার প্রতি যত্নবান হয়ে এই ক্ষেত্রে উন্নতি করা অত্যন্ত জরুরি।

৩। ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় গবেষণা

আধুনিক যুগে ইসলামী মূল্যবোধ ও আদর্শকে সমুন্নত রাখতে গবেষণা একটি অপরিহার্য উপাদান। কোরআন ও হাদিসের আলোকে আধুনিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য গবেষণার গুরুত্ব অপরিসীম।

পরিশেষে, বলতেই হবে ইসলামে গবেষণার গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। আল-কোরআন ও হাদিসের আলোকে আমরা দেখতে পাই যে, জ্ঞান অর্জন ও গবেষণা মুসলিমদের জীবনের অপরিহার্য অংশ। ইসলামের প্রথম যুগ থেকে শুরু করে আজকের দিনে পর্যন্ত গবেষণা ও জ্ঞান অন্বেষণ মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সৃষ্টির রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারি, জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারি এবং একটি উন্নত সমাজ গঠন করতে সক্ষম হই।তাই মুসলিমদের উচিত গবেষণার প্রতি গুরুত্বারোপ করা এবং এটি তাদের জীবনযাত্রার অপরিহার্য অংশ হিসেবে গড়ে তোলা।মহান আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে ভালোমানের গবেষণা করে দেশ, জাতি, সারা দুনিয়া কল্যাণসহ আখেরাতের পাথেয় সংগ্রহ করার তৌফিক দান করুন। আমিন ইয়া রব্বুল আলামীন।

লেখকঃ প্রাবন্ধিক এবং অধ্যাপক, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে লেখক  মোঃ ইয়ামিন হোসেন 

আরও পড়ুন