Ads

ভাল ক্যারিয়ার গঠনে করণীয়

।। ড. মোহাঃ ইয়ামিন হোসেন ।।

আমরা চরম খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে চলছি। চাকুরীর বাজারে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চাকুরী প্রদানের নীতি আমাদেরকে চিন্তিত করে তুলছে । চারিদিকে নৈরাশ্য, বেকারত্ব আমাদেরকে হতাশ করে তুলছে । ভাল পড়াশুনা করার পরও ভাল ক্যারিয়ার কীভাবে গড়া যাবে এই বিষয়ে দিক নির্দেশনার অভাবে অনেক মেধাবী এবং ভাল ছাত্রও দেখা যায় প্রফেশনাল লাইফে ভাল করতে পারে না ।  তাই ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বলছি নিজ দায়িত্বে নিজের  ক্যারিয়ার গঠনে আন্তরিক হোন । এমনকি  অভিভাবককেও বলছি আপনারাও সন্তানের ক্যারিয়ার গঠনের ব্যাপারে সজাগ থাকুন, তাকে মানসিকভাবে সহায়তা দিন । কেউই আপনার বা আপানার সন্তানের সাহায্যে সেভাবে এগিয়ে আসবেন না । নিজের চিন্তা নিজেকেই করতে হবে ।  একজন ছাত্র কীভাবে ভাল ক্যারিয়ার গড়তে পারবে সেই বিষয়ে  দিক নির্দেশনামূলক কিছু লেখার চেষ্টা করেছি । তাই  ভালোমত পড়ে তা অনুসরণ করার চেষ্টা করুন। একজন ভালো ছাত্রের দৈনিক কার্যক্রম এবং অভ্যাসগুলি তাকে ভালো মানের চাকরি বা কর্মের সুযোগ পেতে সহায়তা করতে পারে। এখানে কিছু মূল করণীয় কাজ উল্লেখ করা হলো-

১। সময় ব্যবস্থাপনা

® প্ল্যানিং এবং অর্গানাইজিং: প্রতিদিনের কাজগুলির জন্য একটি পরিকল্পনা করুন। কোন কাজটি কখন করবেন, সেটি আগেভাগেই নির্ধারণ করে নিন।

® প্রাইওরিটাইজেশন: জরুরি এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলিকে অগ্রাধিকার দিন।

২। একাডেমিক উন্নতি

® নিয়মিত অধ্যয়ন: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ধরে পড়াশোনা করুন। কোন বিষয়গুলোতে দুর্বলতা আছে, তা চিহ্নিত করে সেই বিষয়গুলিতে বেশি মনোযোগ দিন।

® ক্লাসে উপস্থিতি: সব ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিত থাকুন এবং শিক্ষকদ্বারা প্রদত্ত লেকচার মনোযোগ দিয়ে শুনুন।

® হোমওয়ার্ক এবং অ্যাসাইনমেন্ট: সময়মত হোমওয়ার্ক এবং অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিন।

৩। এক্সট্রা-কারিকুলার একটিভিটিজ

® কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিজ: বিভিন্ন ক্লাব, সেমিনার এবং কর্মশালায় অংশগ্রহণ করুন যা আপনার স্কিল বাড়াতে পারে।

® ভলান্টিয়ার ওয়ার্ক: বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করুন যা আপনার লিডারশিপ এবং কমিউনিকেশন স্কিল উন্নত করবে।

আরও পড়ুন-বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় আগ্রহীদের জন্য করণীয়

৪। স্কিল ডেভেলপমেন্ট

® ল্যাঙ্গুয়েজ স্কিল: একাধিক ভাষা শেখার চেষ্টা করুন, যা আপনাকে বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা দেবে।

® টেকনিক্যাল স্কিল: প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করুন। যেমন প্রোগ্রামিং, প্রেজেন্টেশন স্কিল, স্লাইড তৈরীর দক্ষতা, ডেটা অ্যানালাইসিস, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদি।

® সফট স্কিল: কমিউনিকেশন, টিমওয়ার্ক, টাইম ম্যানেজমেন্ট, ইত্যাদি দক্ষতা বাড়াতে কাজ করুন।

৫। রিডিং হ্যাবিট

® নিয়মিত পড়াশোনা: বিভিন্ন ধরনের বই, আর্টিকেল এবং সংবাদপত্র পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটি আপনার সাধারণ জ্ঞান এবং বিশ্লেষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।

® রিসার্চ এবং রেফারেন্স: যে বিষয়গুলোতে আগ্রহ আছে, সেই বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে জানার চেষ্টা করুন।

® লেখালেখি চর্চা: নিয়মিত রচনা, প্রবন্ধ, বা ডায়েরি লেখা। এটি ভাষাগত দক্ষতা ও ভাব প্রকাশের ক্ষমতা বাড়াবে।

® প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসা: পাঠ্যবইয়ের বা অন্য যেকোন বিষয়ে প্রশ্ন করা এবং উত্তর খুঁজে বের করা।

৬। স্বাস্থ্য এবং ফিটনেস

® ব্যায়াম: প্রতিদিন কিছু সময় ব্যায়াম করুন যা আপনার শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করবে।

® স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন।

৭। পেশাদারী নেটওয়ার্কিং

® নেটওয়ার্কিং: লিঙ্কডইন এবং অন্যান্য প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকুন। বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি প্রফেশনালদের সাথে যোগাযোগ করুন।

® মেন্টরিং: একজন মেন্টর খুঁজুন যিনি আপনাকে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারেন।

® ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং: ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং গ্রহণ করা এবং নিজের পছন্দের কর্মক্ষেত্রের বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করা।

আরও পড়ুন-বিদেশে এমএস বা পিএইচডির জন্য এসওপি লেখার নিয়ম

৮। প্র্যাকটিক্যাল এক্সপেরিয়েন্স

® ইন্টার্নশিপ এবং পার্ট-টাইম জব: আপনার বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত ইন্টার্নশিপ বা পার্ট-টাইম জব করুন। এটি আপনার প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা বাড়াবে।

® প্রকল্প কাজ: বিভিন্ন প্রজেক্টে অংশগ্রহণ করুন যা আপনার জ্ঞান এবং দক্ষতা বাড়াবে।

টেকসই উন্নয়নে মেধাবীদের মূল্যায়ন

৯। রিফ্লেকশন এবং ইমপ্রুভমেন্ট

® স্ব-মূল্যায়ন: আপনার দৈনন্দিন কাজের উপর ভিত্তি করে নিয়মিত স্ব-মূল্যায়ন করুন এবং কীভাবে আরও ভালো করা যায় তা চিন্তা করুন।

® ফিডব্যাক গ্রহণ: শিক্ষক, বন্ধু, এবং সহপাঠীদের থেকে ফিডব্যাক নিন এবং সেই অনুযায়ী নিজেকে উন্নত করুন।

১০। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ:

® সততা: সব কাজে সততা বজায় রাখা।

শৃঙ্খলা: নিজেকে শৃঙ্খলিত রাখা ও নিয়ম মেনে চলা।

® সমবেদনা ও সহানুভূতি: অন্যের প্রতি সমবেদনা ও সহানুভূতি প্রদর্শন করা।

এই সব অভ্যাস এবং কার্যক্রমগুলো একজন ছাত্রকে একাডেমিক এবং পেশাগত জীবনে সফল হতে সহায়তা করবে। নিয়মিত পরিশ্রম, পরিকল্পনা এবং নির্ভুলতার সাথে কাজ করলে ভালো মানের চাকরি পাওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।মহান আল্লাহ দয়া করে সবাইকে উত্তম রিজিকের ব্যবস্থা করে দিন। আমিন ইয়া রব্বুল আলামীন।

লেখকঃ প্রাবন্ধিক এবং অধ্যাপক, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে লেখক  মোঃ ইয়ামিন হোসেন 

আরও পড়ুন