Ads

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বরাদ্দ কেমন?

।। ড. মোহাঃ ইয়ামিন হোসেন ।।

রাজশাহী বিশ্বিবদ্যালয়ের ইতিহাসে গবেষণা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ ১৪কোটি ২ লাখ টাকা ১জুলাই ২০২৪ হতে ৩০ জুন ২০২৫ এই ১ বছর সময় কালের জন্যে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব বছরগুলোর নিয়ম-নীতির  অনুযায়ী একক গবেষক গবেষণার বরাদ্দ পাবেন ২ লাখ টাকা আর যৌথ গবেষণায় ২ জন গবেষক মিলে পাবেন ৪ লাখ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী এই গবেষণা বরাদ্দকৃত অর্থের একক বা যৌথ যাই হোক অবশ্যই গবেষণার ফলাফল থেকে কমপক্ষে ১টি করে পাবলিকেশন থাকতে হবে, না হলে পরর্বতীতে তিনি আর প্রজেক্টের জন্যে আবেদন করতে পারবেন না।

ধরে নিলাম, ১৪ কোটি ২ লাখ টাকার অর্ধেক অর্থাৎ ৭কোটি ১ লাখ টাকা বরাদ্দ পাবেন ২ লাখ টাকা হারে ৩৫০ জন গবেষক এবং অবশিষ্ট অর্ধেক অর্থাৎ ৭ কোটি ১ লাখ টাকা ১৭৫ জন গবেষক পাবেন ৪ লাখ টাকা করে। তাহলে এই অর্থ বছরের বরাদ্দকৃত গবেষণা বাজেট দিয়েই ৩৫০+১৭৫= ৫২৫ টি প্রজেক্ট থেকে কমপক্ষে ১টি করে হলেও ৫২৫ টি পাবলিকেশন্স  হবে। এই পাবলিেশনগুলো যেন মানের হয়, গবেষণা প্রজেক্টগুলো যেন দেশ ও জাতির কল্যাণে হয়, সেদিকে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সংখ্যার উপর ভিত্তি করে প্রতি ফ্যাকাল্টিতে বাজেট বরাদ্দের বিষয়টা এখন সময় একটু ভাবা দরকার। মলিকুলার স্টাডি, জেনেটিক্স স্টাডি, ফামার্সীর গবেষণা, বায়োকেমিস্ট্রি গবেষণা, কৃষি গবেষণা, মৎস্য গবেষণা, প্রাণী সম্পদের গবেষণার বরাদ্দ অন্যান্য বিষয়ের সাথে মিলিয়ে বরাদ্দ দিলে শুধু অনুচিত নয়, এটা বড় পাপই হবে। তাই দেশ ও জাতির টেকসই উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত গবেষণার বরাদ্দগুলো কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা করা উচিত।

আশার কথা, আমাদের  গবেষকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব গবেষণা ফান্ড ছাড়াও দেশীয় ও  আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকেও প্রজেক্ট পেয়ে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ, UGC, MoE, NST- Special Allocation, Planning Commission of Bangladesh, DoF, Forest Department of Bangladesh etc.

এটা অবশ্যই আশার কথা যে, গবেষণার বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে কিন্তু এটা কোনও ক্রমেই পর্যাপ্ত নয়, আরো ভালো মানোর গবেষণার জন্যে বরাদ্দ বাড়ানো উচিত।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বরাদ্দ ও তার প্রভাব

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সর্বোচ্চ বরাদ্দ ১৪ কোটি ২ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যা গবেষণা কার্যক্রমকে উৎসাহিত করবে এবং গবেষণার ফলাফল থেকে কমপক্ষে ৫২৫টি পাবলিকেশন আশা করা হচ্ছে। তবে গবেষণার মান উন্নত করার জন্য বরাদ্দ আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

আরও পড়ুন-

বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় আগ্রহীদের জন্য করণীয়

বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা বরাদ্দ ও তাদের মান

১. হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি (Harvard University)

গবেষণা বরাদ্দ: ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতে বরাদ্দ ছিল প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার।

পাবলিকেশনের সংখ্যা ও মান:

– প্রতিবছর প্রায় ২০,০০০-এর বেশি গবেষণা প্রকাশনা।

– উচ্চ মানের জার্নালগুলিতে প্রকাশিত হয় যেমন Nature, Science, The Lancet।

২. স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি (Stanford University)

গবেষণা বরাদ্দ: স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক গবেষণা বাজেট প্রায় ১.৬ বিলিয়ন ডলার।

পাবলিকেশনের সংখ্যা ও মান:

– প্রায় ১০,০০০-এর বেশি গবেষণা প্রকাশনা প্রতি বছর।

– IEEE, JAMA, এবং অন্যান্য উচ্চ মানের জার্নালে প্রকাশিত হয়।

৩. অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি (University of Oxford)

গবেষণা বরাদ্দ: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক গবেষণা বাজেট প্রায় ৭৫০ মিলিয়ন পাউন্ড।

পাবলিকেশনের সংখ্যা ও মান:

– প্রতিবছর প্রায় ৮,০০০-এর বেশি গবেষণা প্রকাশনা।

– Lancet, BMJ, এবং অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় জার্নালে প্রকাশিত হয়।

আরও পড়ুন-

কোরআন ও হাদিসের আলোকে গবেষণার গুরুত্ব

তুলনামূলক বিশ্লেষণ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বরাদ্দ ও বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা বরাদ্দের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণার জন্য অনেক বেশি বাজেট এবং উন্নত অবকাঠামো প্রদান করে, যা তাদের গবেষণার মান এবং সংখ্যাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে।

গবেষণা বরাদ্দ ও মান বৃদ্ধির প্রস্তাবনা

বাংলাদেশ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা মান উন্নত করতে গবেষণা বরাদ্দ আরও বৃদ্ধি করা উচিত। উচ্চ মানের গবেষণা ফলাফল পেতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে-

১। গবেষণা বরাদ্দ বৃদ্ধি: গবেষকদের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করতে হবে যাতে তারা উন্নতমানের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন।

২।  আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে সহযোগিতা বাড়াতে হবে।

৩। প্রযুক্তি ও অবকাঠামো উন্নয়ন: গবেষণার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও অবকাঠামো সরবরাহ করতে হবে।

৪। প্রশিক্ষণ ও ওয়ার্কশপ: গবেষকদের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও ওয়ার্কশপ আয়োজন করতে হবে যাতে তারা নতুন গবেষণা পদ্ধতি ও প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন।

৫। গবেষণা ফান্ডিং এর উৎস বৃদ্ধি: শুধু সরকারি বরাদ্দ নয়, বেসরকারি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর থেকেও ফান্ডিং সংগ্রহ করতে হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা বরাদ্দের প্রয়োজনীয়তা ও প্রস্তাবনা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কার্যক্রমের বরাদ্দের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা অত্যন্ত জরুরি। বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির শিক্ষক সংখ্যার ভিত্তিতে এবং গবেষণার গুরুত্ব অনুযায়ী বাজেট বরাদ্দ করা উচিত। বিশেষ করে, মলিকুলার স্টাডি, জেনেটিক্স স্টাডি, ফার্মেসি, বায়োকেমিস্ট্রি, কৃষি, মৎস্য এবং প্রাণী সম্পদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোর গবেষণা বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন।

প্রয়োজনীয়তা ও প্রস্তাবনা

১। শিক্ষক সংখ্যা ও গবেষণার গুরুত্ব

® মলিকুলার স্টাডি ও জেনেটিক্স স্টাডি: এ ক্ষেত্রগুলোতে গবেষণা বরাদ্দ বাড়ানোর মাধ্যমে রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা এবং জৈবপ্রযুক্তির উন্নয়ন সম্ভব হবে।

® ফার্মেসি ও বায়োকেমিস্ট্রি: ওষুধের উন্নয়ন এবং বায়োমেডিকেল গবেষণার জন্য এ ক্ষেত্রগুলোর বরাদ্দ বাড়ানো উচিত।

® কৃষি ও মৎস্য গবেষণা:  খাদ্য নিরাপত্তা এবং টেকসই কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য এ ক্ষেত্রগুলোতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করতে হবে।

® প্রাণী সম্পদ:  প্রাণী সম্পদের উন্নয়ন ও টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য গবেষণার বরাদ্দ বৃদ্ধি প্রয়োজন।

আরও পড়ুন-

ভাল ক্যারিয়ার গঠনে করণীয়

২। গবেষণা বরাদ্দের পুনর্বিবেচনা

®  মলিকুলার স্টাডি, জেনেটিক্স, ফার্মেসি, বায়োকেমিস্ট্রি, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ গবেষণার জন্য কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।

®  গবেষণার গুরুত্ব ও সম্ভাব্য প্রভাব বিবেচনা করে অন্যান্য বিষয়ে বরাদ্দ সামঞ্জস্য করতে হবে।

৩। গবেষণা ফলাফল ও পাবলিকেশন

® প্রতিটি বরাদ্দকৃত প্রকল্প থেকে উচ্চ মানের কমপক্ষে একটি পাবলিকেশন নিশ্চিত করতে হবে।

®  গবেষণার ফলাফলগুলো দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য ব্যবহার করা উচিত।

৪। আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ

®  গবেষণার বরাদ্দ ও মানের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানদণ্ড অনুসরণ করা উচিত।

® আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকল্প ও ফান্ডিং সংস্থার সাথে সহযোগিতা বাড়ানো উচিত।

৫। উন্নত অবকাঠামো ও প্রযুক্তি

®  গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও অবকাঠামো সরবরাহ করতে হবে।

®  গবেষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালনা করতে হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা বরাদ্দের পুনর্বিবেচনা ও পুনর্বণ্টন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মলিকুলার স্টাডি, জেনেটিক্স, ফার্মেসি, বায়োকেমিস্ট্রি, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ গবেষণার জন্য বরাদ্দ বাড়ানো উচিত যাতে দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হয়। গবেষণা কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক মানের করার জন্য আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ এবং উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার জরুরি। তবেই দেশের গবেষণা ক্ষেত্রের উন্নয়ন সম্ভব হবে এবং তা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

পরিশেষে বলবো, বাংলাদেশ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা মান উন্নত করতে গবেষণা বরাদ্দ আরও বৃদ্ধি এবং গবেষণা অবকাঠামোর উন্নয়ন প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গবেষকদের পর্যাপ্ত সুবিধা প্রদান করা উচিত। তাহলেই দেশের গবেষণা খাতের উন্নতি সম্ভব হবে এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল হবে।

লেখকঃ প্রাবন্ধিক এবং অধ্যাপক, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে লেখক  মোঃ ইয়ামিন হোসেন 

আরও পড়ুন