Ads

নামাজ নামাজীকে মন্দ কাজ থেকে ফিরাতে পারে না কেন ?

।। জামান শামস ।।

প্রসংগ নামাজে দ্রুততা পরিহার করা

নামাজ ইসলামের প্রধান ইবাদত। আল্লাহ তাআলা সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির। কেয়ামতের দিন সর্ব প্রথম বান্দার নামাজের হিসাব নেওয়া হবে। নামাজ ইসলাম ও মুসলমানের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু নামাজ কি মানুষকে সব অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে?

‘হ্যাঁ’, নামাজই একমাত্র ইবাদত যা মানুষকে সব অন্যায় ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। এটি কোনো মিথ্যা দাবি নয় আর তা মানুষের কথাও নয়। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে এ ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন-

اُتۡلُ مَاۤ اُوۡحِیَ اِلَیۡکَ مِنَ الۡکِتٰبِ وَ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ ؕ اِنَّ الصَّلٰوۃَ تَنۡهٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَ لَذِکۡرُ اللّٰهِ اَکۡبَرُ ؕ وَ اللّٰهُ یَعۡلَمُ مَا تَصۡنَعُوۡنَ

‘(হে রাসুল!) আপনার প্রতি যে কিতাব ওহি (নাজিল) করা হয়েছে; তা থেকে তেলাওয়াত করুন আর নামাজ প্রতিষ্ঠা করুন। নিশ্চয়ই নামাজ অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন যা তোমরা কর।’ (সুরা আনকাবুত ৪৫)

নামাজ আল্লাহ তাআলা সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির ও সেরা নেয়ামত। যারাই নিজেদের নামাজি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে মহান আল্লাহ সেব বান্দাকে দান করেন অশ্লীলতা, পাপাচার, অন্ধ ভোগ-বিলাস ও ক্ষণস্থায়ী মন্দকাজ থেকে বিরত রেখে পুত-পবিত্র জীবন দান করেন। নামাজ সম্পর্কে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু চমৎকার একটি কথা তুলে ধরেছেন-

‘নিশ্চয়ই আমার কাছে সবচেয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নামাজ। যে ব্যক্তি নামাজের হেফাযত করলো আর যত্নের সঙ্গে নামাজ আদায় করলো; সে তার দ্বীনকে হেফাজত করলো। আর যে নামাজ আদায়ে অবহেলা করলো; সে (দ্বীনের) অন্যান্য সব বিষয়ে আরও বেশি অবহেলা করলো।’ (মুয়াত্তা মালেক, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক)

আমরা নামাজ পড়ি বটে,তবে তা এত দ্রুততার সাথে আদায় করি যা নামাজই হয় না। সবচেয়ে বড় চুরি হচ্ছে নামাজে চুরি।

শাক্বীক্ব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযায়ফাহ্ (রাঃ) এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে তার রুকূ’-সিজদা পূর্ণ করছে না। সে সালাত শেষ করলে তিনি তাকে ডেকে বললেন, তুমি সালাত আদায় করনি। শাক্বীক্ব বলেন, আমার মনে হয় হুযায়ফাহ্ এ কথাও বলেছেন, যদি তুমি এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ কর, তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যে প্রকৃতির উপর আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টি করেছেন, তুমি তার বাইরে মৃত্যুবরণ করবে। (সহীহ : বুখারী ৭৯১)

আবূ ক্বাতাদাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ চুরি হিসেবে সবচেয়ে বড় চোর হলো ঐ ব্যক্তি যে সালাতে (আরকানের) চুরি করলো। সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! সালাতের চুরি কিভাবে হয়? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সালাতের চুরি হলো রুকূ’-সিজদা্ (সিজদা/সেজদা) পূর্ণ না করা! (আহমাদ ২২১৩৬, সহীহ আত্ তারগীব ৫২৪)

নু’মান ইবনু মুররাহ্ (রাঃ)হতে বর্ণিত সবচেয়ে নিকৃষ্ট চোর সেই ব্যক্তি যে সালাতে চুরি করে। ছাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে কিভাবে সালাতে চুরি করে? তিনি বললেন, সে রুকু- সিজদা পরিপূর্ণভাবে করে না’। (মুয়াত্ত্বা মালিক ৪০৩, দারিমী ১৩৬৭, সহীহ আত্ তারগীব ৫৩৪)

আজকাল অধিকাংশ মুছল্লীকে দেখা যায় যে তারা সালাতে ধীরস্থির ভাব বজায় রাখে না। ধীরে-সুস্থে রুকু-সিজদা করে না। রুকু থেকে যখন মাথা তোলে তখন পিঠ সোজা করে দাঁড়ায় না এবং দু’সিজদার মাঝে পিঠ টান করে বসে না। খুব কম মসজিদই এমন পাওয়া যাবে যেখানে এ জাতীয় দু’চারজন পাওয়া যাবে না। অথচ ছালাতে ধীরস্থিরতা বজায় রাখা ছালাতের অন্যতম রুকন। স্বেচ্ছায় তা পরিহার করলে কোন মতেই ছালাত শুদ্ধ হবে না। সুতরাং বিষয়টি বেশ গুরুতর।

আবদুর রহমান ইবনু শিবল (রাঃ)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদায় কাকের মতো ঠোঁকর মারতে, হিংস্র প্রাণীর মতো জমিনে হাত বিছিয়ে দিতে ও উটের মতো মসজিদের মধ্যে নিজের জন্য স্থান নির্দিষ্ট করে নিতে নিষেধ করেছেন। (আবূ দাঊদ ৮৬২, নাসায়ী ১১১২, সহীহ আত্ তারগীব ৫২৩, দারিমী ১৩৬২)

আবূ মাসউদ আল-বাদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি রুকূ হতে উঠার পর সোজা হয়ে দাঁড়াবে না এবং দুই জিজদার মধ্যবর্তী বিরতীর সময় সোজা হয়ে বসবে নয়া তার নামায যথেষ্ট হবে না।(সুনানে আবু দাউদ ৮৫৫)

নামাজে দ্রুততার কাজটি যে আল্লাহর সম্মুখে আদবের চরম খেলাপ, এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। যে মুসল্লী এরূপ করে সে ভর্ৎসনার যোগ্য।

আবু আব্দুল্লাহ আশ’আরী (রাঃ) বর্ণিত একটি হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একদা ছাহাবীদের সাথে ছালাত আদায়ের পর তাদের একটি দলের সাথে বসেছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে ছালাতে দাঁড়াল। সে রুকু করছিল আর সিজদায় গিয়ে ঠোকর মারছিল। তা দেখে নবী করীম (ছাঃ) বললেন, ‘তোমরা কি এই লোকটিকে লক্ষ্য করেছ? এভাবে ছালাত আদায় করে কেউ যদি মারা যায়, তবে সে মুহাম্মাদের মিল্লাত থেকে খারিজ হয়ে মারা যাবে। কাক যেমন রক্তে ঠোকর মারে সে তেমনি করে তার ছালাতে ঠোকর মারছে। যে ব্যক্তি রুকু করে আর সিজদায় গিয়ে ঠোকর মারে তার দৃষ্টান্ত সেই ক্ষুধার্ত লোকের ন্যায়, যে একটি দু’টির বেশী খেজুর খেতে পায় না। দু’টি খেজুরে তার কতটুকু ক্ষুধা মিটাতে পারে?’।(সহীহ ইবনে খুজায়মা ৬৬৫)

যে ব্যক্তি ছালাতে ধীরস্থিরতা বজায় রাখে না, সে যখন উহার বিধান জানতে পারবে তখনকার ওয়াক্তের ফরয ছালাত তাকে আবার পড়তে হবে। আর অতীতে যা ভুল হয়ে গেছে সেজন্য তওবা করবে, সেগুলি আর পুনরায় পড়তে হবে না।

সুতরাং আপনার নামাজ যথাযথ হচ্ছে কিনা,তাতে আল্লাহ সন্তষ্ট হচ্ছেন কিনা তার প্রথম টেষ্ট হলো, নামাজ আপনাকে মন্দ ও অশ্লীল কাজ থেকে ফিরাতে পারছে কিনা। সালাত আদায় করছি আবার গুনাহের কাজও সমান্তরাল চলছে তাহলে সালাত ব্যর্থ ও নিষ্ফল। আর সালাত সফল হবার প্রথম শর্তই হলো সালাতকে সালাতের স্পিরিটে ধীর স্থিরভাবে আদায় করা। এর অনিবার্য ফল হলো,আপনার সালাত শুদ্ধ হবে,মনোসংযোগ থাকবে, যা পড়বেন তা বুঝে পড়বেন এবং সালাতের কিয়াম,রুকু,সিজদাহ ও প্রত্যেক স্থানে দোয়া,দরুদ ও তাসবীহগুলো পূর্ণ হক আদায় করে উচ্চারিত হবে।

আল্লাহ আমাদের সালাতগুলো এভাবে সম্পন্ন করার তৌফিক দিন।আমিন।

লেখকঃ কলাম লেখক এবং সাবেক এডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা,গল্প,কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক!  আপনি আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন,“তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) ।আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে লেখক জামান শামস

আরও পড়ুন