Ads

ইসলামের আলোকে অল্পেতুষ্ট ব্যাক্তি যেভাবে সফল

।। ড. মুর্শিদা খাতুন ।।

দুনিয়ার জীবনে অল্পতেই তুষ্ট থাকা  আমাদের সাদাসিধে ও সংযমী জীবনযাপনের প্রতি উৎসাহিত করে এবং অতিরিক্ত লোভ ও প্রাচুর্যের প্রতি সতর্ক করে। দুনিয়ার জীবনের ভোগ্যবস্তু সাময়িক এবং ক্ষণস্থায়ী।কিন্তু আখিরাতের জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হলো প্রকৃত সফলতা। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ অনুসরণ করে অল্পতে তুষ্ট থাকাই হলো মুসলিমদের জন্য নির্দেশিত পথ। এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদিসে অনেক নির্দেশনা ও শিক্ষা রয়েছে।  :

কুরআনের আলোকে অল্পতেই তুষ্ট থাকার গুরুত্ব

১. সূরা হাদীদ (৫৭:২০)

“জেনে রাখুন, দুনিয়ার জীবন কেবল খেল-তামাশা, শোভা-সজ্জা, পরস্পরের মধ্যে অহমিকা এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধি করার প্রতিযোগিতা মাত্র।”

২. সূরা আল-আ’রাাফ (৭:৩১): “হে আদম সন্তানগণ! তোমরা সর্বদা পরিপাটি পোশাক পরিধান কর এবং খাও ও পান কর, কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না।”

৩  সূরা ত্বাহা (২০:১৩১): “আর তুমি তোমার দৃষ্টি প্রসারিত করো না দুনিয়ার এই জীবনেও যা আমরা বিভিন্ন শ্রেণির মানুষকে দিয়ে উপভোগ্য করেছি। যাতে করে তাদেরকে পরীক্ষায় ফেলি। তোমার প্রভুর দেয়া রিজিকই শ্রেষ্ঠ এবং স্থায়ী।”

৪. সূরা আল-ইমরান (৩:১৪): “মানুষের জন্যে কাঙ্ক্ষিত করা হয়েছে নারীদের প্রতি, সন্তানদের প্রতি, ধন-সম্পদের প্রতি, মুদ্রিত স্বর্ণ ও রৌপ্যের প্রতি, সুদৃশ্য অশ্বের প্রতি, গৃহপালিত পশু ও কৃষি জমির প্রতি প্রগাঢ় আকর্ষণ। এ সবই দুনিয়ার জীবনের ভোগ্য সামগ্রী। আল্লাহর কাছে রয়েছে উত্তম ঠিকানা।”

এখানে দুনিয়ার জীবনের ক্ষণস্থায়ী ভোগ্যবস্তুর প্রতি আসক্তির বিপরীতে, আল্লাহর কাছে রয়েছে চিরস্থায়ী উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল।

৫. সূরা আত-তাকাসুর (১০২:১-২)

“ধন-সম্পদের অধিকতর প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা তোমাদের গাফিল রাখছে, যে পর্যন্ত না তোমরা কবরে পৌঁছাও।”

আরও পড়ুন-

যে কারণে রাতের ইবাদাত অধিক ফলপ্রসূ

৬  সূরা আত-তাওবাহ (৯:৩৪-৩৫)

“আর যারা সোনা ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন।”

এখানে দুনিয়ার সম্পদ জমা করে না রেখে, আল্লাহর পথে ব্যয় করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।.

৭ .সূরা আল-ইমরান (৩:১৮৫)

“প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে এবং তোমরা কেবল তোমাদের কর্মফলের পূর্ণ প্রতিদান পাবে কেয়ামতের দিনে। যাকে আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সেই সফলকাম হবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকার উপকরণ বৈ কিছুই নয়।

৮  “সূরা আন-নাহল (১৬:৯৭): “যে কেউ সৎকর্ম করে, পুরুষ হোক বা নারী এবং সে মুমিন হলে, আমি তাকে অবশ্যই পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে অবশ্যই তাদের সেরা কাজগুলোর পুরস্কার দেব যা তারা করত।”

হাদিসের আলোকে অল্পতেই তুষ্ট থাকার গুরুত্ব

১. (সহীহ মুসলিম ১০৫৪): “রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তুমি যদি তোমার হৃদয়কে সন্তুষ্ট রাখতে চাও তবে পার্থিব জীবনের প্রয়োজনীয়তাগুলোর ব্যাপারে অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকো।”

২. (সহীহ বুখারি ৬৪৪৫):হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে, তাকে যা কিছু প্রদান করা হয়েছে তাতে সে সন্তুষ্ট থাকে এবং আল্লাহ তাকে অল্প দিয়ে তুষ্ট করেন, সে সফল।”

৩.  (তিরমিজি ২৩৭৩):   “হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘সত্যিকারের ধনী সে, যে নিজের যা কিছু আছে তাতে সন্তুষ্ট থাকে।’

৪ .  (তিরমিজি ২৩৪৯) :রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং যার রিজিক যথেষ্ট পরিমাণে দেয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন।তাতে সন্তুষ্ট রেখেছেন, সে সফল হয়েছে।”

এই হাদিসে প্রকৃত সফলতা হলো ইসলাম গ্রহণ করা, প্রয়োজনীয় রিযিক প্রাপ্তি এবং যা আছে তাতে সন্তুষ্ট থাকা।

৫. (সহীহ বুখারি ৬৪৪৬):  রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “ধন-সম্পদের প্রাচুর্য মানে তা নয় যে, কারো ধন-সম্পদের পরিমাণ বেশী। বরং প্রকৃত সম্পদ হলো মনের ধনী হওয়া।”

আরও পড়ুন-

দুনিয়ার জীবনে আখিরাতের প্রস্তুতি যেভাবে নেয়া দরকার

৫.(সহীহ বুখারি ৬৪৩৯):  “আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যদি আদম সন্তানের কাছে এক উপত্যকা পরিমাণ স্বর্ণ থাকে, তবে সে আরেকটি উপত্যকা চায়। আদম সন্তানের পেট মাটি ছাড়া কিছুই পূর্ণ করতে পারে না। আর আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন, যে তাঁর কাছে তওবা করে।’”

৬.  (সহীহ মুসলিম ২৯৫৬): “রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়ার জীবন একজন মুমিনের জন্য কারাগারের মতো এবং কাফেরের জন্য বাগানের মতো।’ “

এই হাদিসে মানুষের প্রকৃতির একটি দিক হলো তারা অধিক সম্পদ চায়, তবে এই প্রবণতা অতিক্রম করে অল্পতেই তুষ্ট থাকা উচিত

দুনিয়ার জীবনে অল্পতেই তুষ্ট হওয়া বা সন্তুষ্ট থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী শিক্ষা, যা মানুষকে পরকালের জন্য প্রস্তুত করে এবং দুনিয়ার প্রলোভন থেকে দূরে রাখে।

অল্পতেই তুষ্ট থাকার উপকারিতা

১. আধ্যাত্মিক শান্তি

যারা অল্পতেই তুষ্ট থাকে, তারা দুনিয়ার প্রলোভন থেকে মুক্ত থাকে এবং তাদের অন্তরে আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল বৃদ্ধি পায়।

২পরকালের জন্য প্রস্তুতি

দুনিয়ার প্রলোভন থেকে দূরে থাকলে মানুষ পরকালের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারে এবং তার আমল বৃদ্ধি করতে পারে।

৩. সামাজিক শান্তি

অল্পতেই তুষ্ট থাকার মাধ্যমে সমাজে হিংসা, লোভ এবং প্রলোভনের প্রবণতা কমে যায়। দুনিয়ার জীবনে অল্পতেই তুষ্ট থাকার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। অল্পতেই তুষ্ট থাকার এই গুণাবলী আমাদেরকে অহংকার, লোভ এবং হিংসা থেকে রক্ষা করে। এটি আল্লাহর প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা ও আস্থাকে বৃদ্ধি করে এবং আমাদের দুনিয়াবী ও আখিরাতের জীবনকে সুন্দর ও শান্তিময় করে তোলে।

শেষ কথা

দুনিয়ার জীবনের প্রাচুর্য ও অর্থ-সম্পদ মানুষকে সবসময় তুষ্ট করতে পারে না। অন্তরের শান্তি ও তৃপ্তি আসে আল্লাহর স্মরণ, তওবা এবং সৎকর্মের মাধ্যমে। অল্পতেই তুষ্ট থাকার মধ্যে রয়েছে অন্তরের প্রশান্তি এবং পার্থিব জীবনের দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি। এজন্য আমাদের উচিত দুনিয়ার প্রতি লোভ কমিয়ে আখিরাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করা।

লেখকঃ ডিরেক্টর, ইনস্টিটিউট অব ন্যাচারাল রিসোর্সেস রিসার্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট, রাজশাহী-৬২০৬

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

আরও পড়ুন