Ads

যে কারণে রাতের ইবাদাত অধিক ফলপ্রসূ

।। ড. মুর্শিদা খাতুন ।।

সুরা মুজ্জাম্মিল কুরআনের ৭৩তম সুরা। এই সুরাতে রাতের ইবাদতের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে এবং এই সম্পর্কে ইসলামের বিধানগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। সুরা মুজ্জাম্মিলসহ কোরআনের আলোকে  রাতের ইবাদত সম্পর্কে একটু জানার চেষ্টা  করি।

১. রাতের ইবাদতের আদেশ

সুরা মুজ্জাম্মিলে আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে রাতের ইবাদতে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন। সুরার প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে:

“হে বস্ত্রাবৃত, রাতের প্রায় অর্ধেক সময় বা কিছু কম বা বেশি সময় ইবাদত করো। কুরআন তেলাওয়াত করো ধীরস্থিরভাবে।” (সুরা মুজ্জাম্মিল ৭৩:১-৪)

২. রাতের ইবাদতের গুরুত্ব

রাতের ইবাদত আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়। এটি মানুষের আত্মার পরিশুদ্ধি ও মনোবল বৃদ্ধি করে। রাতের সময় মানুষের মন শান্ত থাকে এবং ইবাদতে মনোযোগ নিবদ্ধ হয়।

৩. সহজ ও কষ্টকর ইবাদত

আল্লাহ বলেন, রাতের ইবাদত করা কষ্টকর হলেও এটি আত্মার জন্য ফলপ্রসূ। এটি মানুষের ধৈর্য ও সংকল্প বৃদ্ধি করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভে সহায়ক হয়।

আরও পড়ুন-

যেভাবে সালাত ফরজ হয়েছে মিরাজে

 

৪. তেলাওয়াতের প্রয়োজনীয়তা

সুরা মুজ্জাম্মিলে কুরআন তেলাওয়াত করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। ধীরস্থিরভাবে কুরআন তেলাওয়াত করতে বলা হয়েছে যাতে এর অর্থ ও মর্মার্থ বুঝা যায় এবং হৃদয়ে প্রতিফলিত হয়।

 ৫. ব্যক্তিগত ও সামগ্রিক উপকারিতা

রাতের ইবাদত ব্যক্তিগত উন্নতির পাশাপাশি সামগ্রিক সমাজের উন্নতিতে সহায়ক। যারা রাতের ইবাদত করেন তারা নিজেদের আচার-আচরণে উত্তম হন এবং সমাজে ন্যায়পরায়ণতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখেন।

সুরা মুজ্জাম্মিলে রাতের ইবাদত করা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম মাধ্যম বলা হয়েছে এবং এটি মুসলমানের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাতের ইবাদতের গুরুত্ব কুরআন ও হাদিসে ব্যাপকভাবে বর্ণিত হয়েছে। রাতে ইবাদত, বিশেষ করে তাহাজ্জুদ নামাজ, ইসলামের আধ্যাত্মিক অনুশীলনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যান্য সুরাতেও এর ধারণা  পাওয়া যায়

“তাদের পার্শ্বদেশ শয্যা থেকে আলাদা থাকে; তারা তাদের রবকে ভয়ে ও আশায় ডাকে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে।” (সুরা আস-সাজদাহ -১৬)

এই আয়াতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যারা রাতে ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর ইবাদত করেন, তাদের মর্যাদার কথা।

“তারা রাতে খুব কমই শয়ন করত। এবং প্রত্যুষে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত (সুরা আদ-ধারিয়াত -১৭-১৮)

আরও পড়ুন-

কোরআন বুঝায় ব্যর্থতা ও তার পরিণাম

হাদিসের দৃষ্টিকোণ থেকে রাতের ইবাদত

কোরআনের পাশাপাশি হাদিসের মাধ্যমে আল্লাহর রাসুল  সাঃ রাতের ইবাদতকে অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন

আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “আমাদের প্রতিপালক প্রতি রাতে নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন যখন রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকে এবং বলেন, ‘কে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব; কে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে তা দান করব; কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব।’ (সহিহ বুখারি -১১৩১)

জাবির (রা) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “রাতের মধ্যে এক ঘণ্টা আছে, যা যদি একজন মুসলিম সেই সময়টিতে আল্লাহর কাছে দোয়া করে, তাহলে আল্লাহ তাকে তা দান করবেন।” (সহিহ মুসলিম -৭৫৮)

আলী (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, “তাহাজ্জুদ নামাজ পড়। এটা ছিল তোমাদের পূর্ববর্তী সৎকর্মশীলদের অভ্যাস। এটি তোমাদের রবের নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম, পাপের কাফফারা, এবং শরীরের রোগ থেকে মুক্তি।” (তিরমিজি-৩৫৪৯)

কুরআন ও হাদিসের  এধরনের বর্ননা  থেকে বুঝা যায় যে, রাতের ইবাদত ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণএকটি বিষয় । এটি মুসলিমদের আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য বিশেষ উপকারী এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম  মাধ্যম। আল্লাহ  আমাদেরকে রাতের  ইবাদতে অভ্যস্থ হওয়ার তাওফিক  দিন৷ আমীন।

লেখকঃ ডিরেক্টর, ইনস্টিটিউট অব ন্যাচারাল রিসোর্সেস রিসার্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট, রাজশাহী-৬২০৬

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

আরও পড়ুন