Ads

কোটা প্রথা যেভাবে জাতিকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে  

।। আসাদুল্লাহ ।।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবীত সোনার ছেলেরা আজ পথ আগলে দাঁড়াচ্ছে যখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা ছুটছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়তে। বৈষম্য আর অনাচারের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর সাহসী বক্তব্য যেখানে পুরো বাঙালী জনতাকে রাজপথে দাঁড় করিয়েছিল, সেখানে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া সোনার বাঙলায় ছাত্র সংগঠনের অসাধু নেতারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে মাঠে নামতে দিচ্ছে না।

বলতে হয় শুধু বুলি আওড়িয়ে যদি আদর্শ ধারণ করা যেতো তাহলে বছর বছর আর দেশে নির্বাচন করতে হতো না, একই সংসদ আসনে একাধিক নেতৃত্বের লড়াই করতে হতো না। যার ব্যথা তাকেই ওষুধ লাগাতে হয়। সংগঠনের কিছু নেতা হয়তো চাটুকারিতায় উপরমহলের দৃষ্টি অর্জনে সক্ষম হবে কিন্তু বাকিদের কি হবে? যারা এই চাটুকারের পেছনে হৈ হৈ করছেন। এই চাটুকার, দালাল নেতা তো নিজের স্বার্থ হাসিল করে পগারপার হয়ে যাবে। কিন্তু আপানকে পড়ে থাকতে হবে বছরের পর বছর। সময় হারিয়ে বুঝতে পারবেন যে মোহের পিছনে ছুটছিলেন তার নাম জীবন নয়। জীবন অনেক কঠিন, ততদিনে বুঝতো আসবে কিন্তু করবার মতো কিছু অবশিষ্ট থাকবে না।

বাঙালীর স্বাধীনতার ভিত্তি গড়া প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাত্তরে যেমন মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু তৈরি হয়েছিলো তেমনই ২০১৮ সালে এসেও আত্মত্যাগী নেতার উপস্থিতি দেখা গেছে। কেউ কেউ পথ হারিয়েছে কেউ আবার চলেছে আপন পথে। বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাস না জেনেও অনেকের চাকুরি হয়ে যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স হয়ে যায় কিংবা সরকারি ভাতাও পেয়ে যায়। অথচ স্বাধীনতাকে ধারণ করে এমন মানুষেরা বঞ্চিত হয় সবকিছু থেকে। ৫০০০ তম মেরিট থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায় না; কিন্তু ১০০০০ তম এর পর থেকেও চান্স পেয়ে যায়। চাকুরিতেই একই দশা, অনেক ভালো করেও দিনশেষে ব্যর্থতার গ্লানি টানতে হয় বিশেষ কোনো সুবিধা না থাকার সুবাদে।

আরও পড়ুন-

ভাল ক্যারিয়ার গঠনে করণীয়

এসব কিছু কোটারই ফল। কোটা কেবল বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন, সুবিধাবঞ্চিতের জন্য হওয়া উচিৎ। মুক্তিযুদ্ধারা কখনোই এই বিশ্বাসে যুদ্ধ করেননি যে পরবর্তীতে তাদের সন্তানেরা সুবিধা ভোগ করবে আর সাধারণ মানুষেরা বৈষম্যের শিকার হবে।

মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিলো বৈষম্য থেকে মুক্তি, শোষণ থেকে মুক্তি, স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকার জন্য মুক্তি। স্বাধীনতার আজ পঞ্চাশ বছর পার হয়ে গেলো তবুও মুক্তির সূর্য এখনোও উদয় হয়নি বাংলার আকাশে। বৈষম্য আর শোষণ বারেবার নতুন রূপে এসে সাধারণের মাঝে হানা দিয়েছে।

অধিকার বঞ্চিত করেছে অগণিত পরিশ্রমীদের। এসব দেখার জন্য হয়তো আরেকজন বঙ্গবন্ধু নেই তবে বঙ্গবন্ধুকে তৈরি করা সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখনোও ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, তৈরি করছে লড়াকু মনোভাবের শিক্ষার্থী কিংবা পা চাটা চাটুকার দালালদের।

মুক্তিযুদ্ধা কোটা নিয়ে ২০১৮ সালের পর আবার এখন নতুন করে আইন জারি হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানের সেই বৈষম্যের চিত্র আবার রংতুলি ছিটাচ্ছে এই স্বাধীন বাংলার পতাকায়। মেধাবী, পরিশ্রমীদের বদলে দুর্বল, অযোগ্যরা গিয়ে বসছে মসনদে। একটা জাতিকে অন্ধকারে ঠেলে দিতে এর চেয়ে বেশি কিছুর দরকার হয় না। অযোগ্যরা যখন যোগ্যদের শাসন করে তখন ধ্বংস অনিবার্য। নিজেদের পকেট আর স্বার্থ ছাড়া যারা কিছু বুঝে না তাদের দিয়ে আর যা কিছুই হোক দশের কিংবা দেশের উন্নতি করা সম্ভব নয়।

কঠোর পরিশ্রম করে যে অবস্থা হাসিল করা হয় মানুষ তার কদর করে, আর যে পরিশ্রমের তুলনায় বেশি কিছু পেয়ে বসে তখন সে করে অপব্যবহার আর অন্যায় আচার।

মুক্তিযুদ্ধাদের সম্মানে মাসিক ভাতা প্রদান করা হয়, এছাড়াও বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন তবুও যেনো তাদের বংশধর হিসেবে পাওনা শোধ হয় না। শিক্ষা থেকে শুরু করে চাকুরি পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রে চাই তাদের আলাদা তোষামোদ। আমার কলেজে জিপিএ ৫.০০ পেয়েও অনেক শিক্ষার্থী চান্স পায়নি কিন্তু ৪.৩৪ পেয়ে এক শিক্ষার্থী চান্স পেয়েছিল। ফলাফল সে বোর্ড পরীক্ষায় কলেজের শেষের দিকে ১০ জনের মধ্যে ছিল। কারণ তাকে যোগ্যতার চেয়ে বেশি দেয়া হয়েছিল, ফলাফল তো সেই যোগ্যতা অনুযায়ীই আসবে। একই অবস্থা দেখেছি ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষাতেও। ৭০০০ পজিশনে থেকে কোনো সাবজেক্ট পায়নি কিন্তু ১১০০০+ অবস্থান থেকে ঠিকই চান্স পেয়েছে। ফলাফল নির্ধারিত সময়ে অনার্স শেষ করতে পারেনি কেউ কেউ।

আরও পড়ুন-

বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় আগ্রহীদের জন্য করণীয়

বর্তমানে যারা ছাত্র-রাজনীতি করছে, নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে ভার্সিটির হলগুলোতে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য দেখা যায় কিন্তু এরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক অথচ কখনোও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ঘেঁটেও দেখেছে কিনা সন্দেহ, বঙ্গবন্ধুর বইগুলো পড়লেও অন্তত তার সম্পর্কে জানা যায় কিন্তু এদের ফুরসত কই, এরা তো চাটুকারিতা আর দালালি করেই নেতা বনে যায়।

একাত্তরে যদি ভার্সিটির হলগুলো এমন দালাল নেতা থাকতো তাহলে হয়তো বঙ্গবন্ধু কখনোও তৈরি হতো না।

গত দুইদিন জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোটা বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়েছে কিন্তু এখন প্রতিটি হলের ছাত্র সংগঠনের ক্যান্ডিডেটরা হলের গেইটে কিংবা বিল্ডিংয়ে লনে অবস্থান করছে যাতে কেউ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে না পারে।

২০১৮ সালেও একই চিত্র দেখা গিয়েছিলো। কিন্তু গুটিকয়েক ছাড়া তখনকার সেই ভাইগুলো মুখ লুকিয়ে এখন গিয়ে আন্দোলনে যোগদান করছে। সবাই নিজের স্বার্থ খুঁজে কিন্তু এই কোটা আন্দোলন কোনো ব্যক্তি স্বার্থের জন্য নয়। এই আন্দলোন ব্যক্তি পর্যায় থেকে দেশ ও দশের জন্য। এই আন্দোলন এক নিকশ অন্ধকার থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচানোর আন্দোলন। যারা বৈষম্য করেছে তারা বেশিদিন টিকতে পারেনি। একাত্তরে যেমন বৈষম্যের দেয়াল ভেঙে ন্যায়ের পতাকা উড়ানো হয়েছিলো, সেই আলো আবার প্রস্ফূটিত হবে বাংলার আকাশে। আজকেও আগের আইন বহাল রয়েছে, কোর্ট থেকে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। ছাত্রজনতা এতো সহজে দমে যাওয়ার পাত্র নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আন্দোলন শুরু করেছে এখন তা দেশের আনাচে কানাচে পর্যন্ত ছেয়ে গেছে। শিক্ষা দেয়া হয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে, ন্যায়ের পথে লড়তে৷ শিক্ষার্থী সমাজ আগেও এই বাংলার বুকে স্বাধীনতার পতাকা উড়িয়েছে।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের ভবিষ্যতের জন্য শঙ্কিত। বড় ভাইদের পরিশ্রম, ত্যাগ সবকিছু চোখের সামনে থেকে দেখছে ।  কিছুদিন পর নিজেদেরকেও চাকুরি বাজারে দর হাঁকাতে হবে। যথেষ্ট মেধা, পরিশ্রম করার পরও যখন চাকুরি থেকে বিচ্যুত হবে তখন করার হয়তো কিছুই নাই। কোটাধারীরা তাদের অযোগ্যতায় যদি চালকের আসনে বসে তাহলে দুর্ঘটনা তো অনিবার্য। অনেক কোটাধারী শুধু এই আশায় বসে থাকে যে কোটার বলে চাকুরি হয়ে যাবে পরিশ্রম করে কি লাভ। দিনশেষে ক্ষমতাধরদের জন্য এটা কোনো সমস্যা না হলেও সাধারণ জনগণ ঠিকই এর ভুক্তভোগী।

আরও পড়ুন-

পেশাগত উন্নয়নে সফট স্কিল

যখনই কোটা আন্দলোনের ডাক এসেছে অমনি ছাত্র সংগঠনও তাদের কর্মসূচি দিয়েছে ৷ ছাত্র সংগঠন যেখানে হলে সিটের জন্য একটা শিক্ষার্থী চা-বিস্কুট নাস্তার দাম দিচ্ছে সেখানে বিনা লাভে শিক্ষার্থী স্বাচ্ছন্দ্যে আন্দোলনে যোগ দিচ্ছে। কারণ এটা অস্তিত্বের লড়াই, বেঁচে থাকার লড়াই, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষা করার লড়াই। ছাত্র সংগঠনের কর্মসূচিতে এক প্রকারের অনিচ্ছা স্বত্বেও যেতে হয়, নাহয় হল থেকে বের করে দিবে, ট্যাগ লাগিয়ে দিবে, মার খেতে হবে। এই কোটা আন্দোলনেও একই অবদান রাখছে। গেস্টরুমে নিয়ে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যোগদানে নিষেধ করা হচ্ছে, সকাল বেলা হল গেইট আগলে দাঁড়িয়েছে যেন কেউ আন্দোলনে যোগ না দিতে পারে। এই বৈষম্যের শেষ কোথায়, কারো জানা নেই।

আন্দোলনে যোগদানের ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলো এগিয়ে থাকলেও বুয়েট কিংবা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিরব ভূমিকা পালন করছে। সরকারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনোও আন্দলোনের ঢঙ্কা বেজে উঠেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত সাত কলেজ থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যোগ দিলেও সামগ্রিকভাবে এখনোও যোগদান করেনি। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা লাগাতার কর্মসূচি পালন করছে। পদযাত্রা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে নিউটমার্কেট, সাইন্সল্যাব হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত। ভোরে সূর্য উঠার সাথে সাথে শিক্ষার্থীরা অধিকার আদায়ের আন্দলোনে বন্ধু, পরিচিতজনদের সাথে অংশ নিচ্ছে।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

আরও পড়ুন