Ads

ট্যাবু ভাঙার নামে শালীনতাবোধ হ্রাসের প্রশিক্ষণ !

।। ড. মোহাঃ ইয়ামিন হোসেন ।।

ট্যাবু ভাঙ্গার নামে আমাদের দেশের  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন  কিশোর ও কিশোরীদের লজ্জা হননের মহা আয়োজন শুরু হয়ে গেছে । ট্যাবু ভাঙতে গিয়ে  উঠতি বয়সী কিশোর ও কিশোরীদের তাদের লজ্জা ও শালীনতাবোধ হ্রাসের ট্রেনিং দেয়া  হচ্ছে না তো? প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যদি এসব নিয়ে খোলামেলা আলোচনা চলতে থাকে তাহলে খুব শীঘ্রই হয়তো পশ্চিমা বিশ্বের মতো আমাদের ছেলে -মেয়েরাও তাদের লজ্জা ও শালীনতাবোধ হারিয়ে ফ্রি মিক্সিং করার শুরু  করে দিবে  প্রকাশ্যে।  লজ্জা যদি মানুষের না থাকে তাহলে সে যে কোনও পাপ কাজে নির্দ্বিধায় জড়িয়ে যায় । কারণ লজ্জা মানুষকে পাপ কাজ থেকে দূরে রাখে । নবী কারীম সাঃ বলেছেন, মানুষ পূর্ববর্তী নবুওয়াতের যে বাণী লাভ করেছে (অর্থাৎ পূর্ববর্তী নবীদের যে শিক্ষা এ পর্যন্ত পৌঁছেছে) তা হচ্ছে– তুমি যদি লজ্জাই না কর তবে যা চাও করতে পার।’ -(বুখারি, হাদিস) । হাদিসে লজ্জাকে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়েছে। আল্লাহর রাসুল সাঃ বলেছেন, ‘লজ্জা ঈমানের অংশ।’-(বুখারী ও মুসলিম) । সেই লজ্জা তাড়ানোর প্রশিক্ষণ চললে কোমল মতি কিশোর-কিশোরীদের ঈমান, আখলাক ঠিক থাকবে তো?

সেদিন ঢাকার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব স্কুল এন্ড কলেজের উপর বিবিসির এক প্রতিবেদন দেখলাম । যেখানে দেখানো হয়েছে  মেয়েদের প্রজননতন্ত্র ও  ঋতুস্রাব নিয়ে খোলামেলা আলোচনার ক্লাস করার পরে কিশোর- কিশোরীদের প্রতিক্রিয়া । এক কিশোরী বিবিসির সেই প্রতিবেদনে বলেছিল, “ আগে আমার বেশ লজ্জা লাগতো ছেলে বন্ধুদের সাথে কথা বলতে, এখন তাদের ক্লাসে একসাথে ছেলে মেয়েদের সামনে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ায় এখন আর আগের মতো অতটা লজ্জা লাগে না ছেলে বন্ধুদের কাছে ।”

গতকাল শায়খ আহমাদুল্লাহ এই বিষয় নিয়েই ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন । তিনি লিখেছেন,

“ট্যাবু ভাঙার নামে কিশোর-কিশোরীদের একত্রে বসিয়ে ঋতুস্রাবের গল্প বলতে উদ্বুদ্ধ করছে আমাদের পাঠ্যবই। আবার উপদেশ দেওয়া হচ্ছে, ঋতুস্রাবের প্যাড কেনার প্রয়োজন হলে মাকে নয়, বাবা অথবা বড় ভাইকে বলো। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো বিশেষ স্কুলে উদযাপন করে ছাত্র-ছাত্রীর হাতে একত্রে তুলে দেওয়া হচ্ছে প্যাড।

সৃষ্টির সূচনাকাল থেকেই ঋতুস্রাবের ট্যাবু ছিল। তাতে পৃথিবীর বিশেষ কোনো ক্ষতি হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। আর সব ট্যাবুই ক্ষতিকর নয়। আমাদের জীবনে এমন অনেক কিছু আছে, যেগুলোতে আমরা আড়াল রাখি। ভরা মজলিশে আমরা স্বশব্দে বায়ু ত্যাগ করি না। এটা আমাদের শালীনতা, সুরুচিবোধ। ঋতুস্রাবের বিষয়টিও অমন।

বর্তমান পৃথিবীতে যারা ঋতুস্রাবের কথিত ট্যাবু ভেঙেছে বা ভাঙতে পারেনি, তাদের কতটুকু লাভ বা ক্ষতি হয়েছে? মূলত জাগতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ঋতুস্রাবের ট্যাবু ভাঙা না-ভাঙার সরাসরি কোনো সম্পর্কই নেই।

আমাদের মেয়েরা ঋতুস্রাব বিষয়ে সচেতন হোক, আমরাও চাই। কিন্তু এর সঙ্গে উঠতি বয়সী কিশোরদের জড়ানো কেন! এর মাধ্যমে যে আমাদের চিরায়ত শালীনতাবোধের শেকড় কাটা হচ্ছে, সচেতন মানুষ মাত্রই তা বুঝতে পারেন।

এরই ধারাবাহিকতায় আমরা দেখতে পাই, নবম শ্রেণীর জীবন ও জীবিকা বইতে স্থান পেয়েছে অশ্লীলতায় ভরপুর নারী সাজা পুরুষদের অন্তর্বাসের ওয়েবসাইটের কিউআর কোড, যা শরীফার গল্পের থিমের সাথে মিলে যায়।

এছাড়াও আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইগুলোর মাধ্যমে কোমলমতি শিশুদেরকে অবাধ মেলামেশার উস্কানি দেয়া হচ্ছে, পরিবার-ব্যবস্থাকে উপস্থাপন করা হচ্ছে নেতিবাচকভাবে।

শালীনতাবোধ আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের গর্ব। আমাদের পরিবারিক বন্ধন এখনো যে পৃথিবীর বুকে উজ্জ্বল হয়ে টিকে আছে, এর মূলে রয়েছে শালীনতার চর্চা। এই শালীনতা ধ্বংস হলে এদেশের হৃৎপিণ্ডে যে গভীর ক্ষত তৈরি হবে, সেই ক্ষত সারাবার কোনো ওষুধ পাওয়া যাবে না।”

আরও পড়ুন-

সন্তানকে মুমিন হিসেবে গড়ে তুলতে করণীয়

 

লেখাটির বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, এতে ঋতুস্রাব এবং শালীনতা নিয়ে একটি বিতর্কিত মতামত প্রকাশ করা হয়েছে। লেখাটি কিশোর-কিশোরীদের একত্রে ঋতুস্রাবের গল্প বলতে উৎসাহিত করার এবং তাদের বাবার কাছে প্যাড কেনার উপদেশের সমালোচনা করেছে। এটি আমাদের চিরায়ত শালীনতাবোধ এবং সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছে।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপর নেতিবাচক প্রভাব

১। শালীনতাবোধের হ্রাস

ঋতুস্রাবের মতো ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা শালীনতাবোধের হ্রাস ঘটাবে। শালীনতা আমাদের সমাজের একটি মূল্যবান অংশ, যা পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনকে মজবুত করে।

২। পারিবারিক বন্ধনের দুর্বলতা

প্যাড কেনার জন্য বাবার বা বড় ভাইয়ের কাছে যাওয়ার উপদেশ আমাদের পারিবারিক বন্ধনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এর ফলে, পরিবারের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ধারণা হ্রাস পেতে পারে।

৩। অশ্লীলতার প্রচার

নবম শ্রেণীর বইতে অন্তর্বাসের ওয়েবসাইটের কিউআর কোড অন্তর্ভুক্ত করা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইগুলোর মাধ্যমে অবাধ মেলামেশার উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে। এতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে অশ্লীলতা এবং অবাধ মেলামেশার প্রতি প্রবণতা বাড়তে পারে।

আরও পড়ুন-

নারীর সত্যিকারের স্বাধীনতা আসে যেভাবে

৪। ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির হ্রাস

ঋতুস্রাবের মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা আমাদের চিরায়ত ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতি হুমকি স্বরূপ। এর ফলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা হারাতে পারে।

৫। মনস্তাত্ত্বিক চাপ

কিশোর-কিশোরীদের উপর এ ধরনের আলোচনা মানসিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তারা ব্যক্তিগত ও শারীরিক পরিবর্তন নিয়ে লজ্জাবোধ করতে পারে, যা তাদের আত্মবিশ্বাস ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

শায়খ আহ্মাদুল্লাহ তার লেখার পোস্টের কমেন্টে উল্লেখ করেন-

“পশ্চিমা দুনিয়া অনেক আগেই এই জাতীয় ট্যাবু ভেঙেছে। বিনিময়ে সেখানকার কিশোরীরা পেয়েছে অবাধ যৌনাচার, স্বেচ্ছাচারিতা, হতাশা, আত্মহত্যার অসুখ এবং ভঙ্গুর পরিবার-ব্যবস্থা। এইসব ব্যাধী আমাদের জীবনকেও তছনছ করুক, আমরা তা চাই না।”

আসলে ট্যাবু ভাঙ্গার আগে আমাদের শালীনতা এবং পারিবারিক বন্ধন রক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে এবং ঋতুস্রাব নিয়ে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার অনেক আশঙ্কা রয়েছে  । আল্লাহ আমাদের শিক্ষা কারিকুলামের প্রবর্তকদের ভাল কিছু করার জন্য বোধ শক্তি জাগিয়ে দিন । মহান আল্লাহ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, দেশ ও জাতিকে রক্ষা করুন। আমিন!

লেখকঃ প্রাবন্ধিক এবং অধ্যাপক, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে লেখক  মোঃ ইয়ামিন হোসেন 

আরও পড়ুন