Ads

বলদ গরু ও খাসি ছাগলের কি কুরবানী হবে না?

 

।। জামান শামস ।।

ইউটিউবে একজনের একটি ওয়াজ শুনছিলাম। তিনি বলেছেন,নিখুত পশু কুরবানী দিতে হবে,এটা হাদিস কোরআনের নির্দেশনা। কিন্তু, গরুর বলদ, আর ছাগলের মধ্যে খাসীর জাত যেগুলোর ছোটবেলাতে টেস্টিস কেটে পুরুষত্ব নষ্ট করানো হয়, সেইগুলো কি করে কুরবানী হবে ?

এ যাবৎ নিখুত পশু কিনতে কেউ পাঁঠা কিনে নেননি, সবাই খাসি ছাগলই বেঁছে নেন । গরুর ক্ষেত্রের এড়ে গরু কুরবানী দেয়া হয়, তা ঠিক আছে । কিন্তু বলদ গরুও কুরবানী দেয়া হয়; সেটা কি করে জায়েজ , যখন বলা হয়েছে নিখুত কুরবানী দিতে হবে ? নিখুত বলতে বলা হয়েছে অঙ্গহানী কোন পশু কুরবানী জায়েজ হবে না । তাহলে টেস্টিস কাটা কোন পুরুষত্বহীন খাসী বা বলদ গরু কি কুরবানী শরীয়তে ইসলাম মোতাবেক জায়েজ হবে ?

কারণ, খাসি বকরী আর বলদ গরুকে টেস্টিস কেটে দুটি অপরাধ করা হল, এক তাকে পুরুষত্বহীন করা ও দুই অঙ্গহানী করা । কোনও জীবের এই দুটো করানোই হারাম । কারণ পুরুষত্বহীন করা হল তাকে বংশবৃদ্ধির ক্ষমতা প্রদান থেকে বিরত রাখা, যা ইসলামের দিক দিয়ে হারাম । খোঁজা বানানো জায়েজ নয় । অপরদিকে অঙ্গহানীও হারাম । তাহলে এমন জীব কি করে কুরবানীর জন্য উপযুক্ত ? যদি না হয় তবে এ যাবৎ কেন কোনও আলেম এমন কথা ঘোষণা দিলেন না যে খাসি ছাগল ও বলদ গরু কুরবানী নাজায়েজ ? এতো ইসলামী চিন্তাবীদের মাথায় কেন এসব চিন্তা আসেনি ?

সহীহ বুখারীর ভাষ্যকার ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ‘খাসী’ করার কারণে কেউ কেউ এটাকে খুঁৎওয়ালা পশু বলে অপছন্দ করেছেন। কিন্তু মূলতঃ এটি কোন খুঁৎ নয়। বরং এর ফলে গোশত রুচিকর ও সুস্বাদু হয় এবং দুর্গন্ধ দূরীভূত হয় (ইবনু হাজার আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী শরহ ছহীহুল বুখারী ১০/১২)। ইবনু কুদামা বলেন, খাসীই কুরবানীর জন্য যথেষ্ট। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দু’টি খাসী দিয়েই কুরবানী করতেন (মির‘আত ৫/৯১)।

খোদ নবী সাঃ কোন কোন পশু জবাই করার উপযুক্ত নয় সে সম্পর্কে হাদীস বর্ণনা করেছেন। বারা’ ইবন আযিব রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে বলেন, চার প্রকারের পশু কুরবানির জন্য বৈধ নয়: ১. যে পশুর একটি চক্ষু অন্ধ এবং তার অন্ধত্ব স্পষ্ট, ২. অসুস্থ পশু, যার অসুস্থতা স্পষ্ট, ৩. খোড়া পশু, যার পায়ের বক্রতা স্পষ্ট এবং ৪. ভগ্নপদ পশু, যার মগজ নেই (হাড্ডিসার হয়ে গিয়েছে।) (আহমাদ ও সুনান চতুষ্টয় । তিরমিযি ও হাকিম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)। [মুসনাদ আহমাদ, হাদীস- ১৮৫১০ : সুনান আবু দাউদ, হাদীস- ২৮০২ : সুনান ইবন মাজাহ, হাদীস-৩১৪৪; সুনান নাসায়ি, হাদীস-৪৩৭০: সুনান তিরমিযি,

আলী রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা (কুরবানির পশুর) চক্ষু ও কর্ণ ভালো করে দেখে নেব এবং যে পশুর কর্ণের অগ্রভাগ কর্তিত, অথবা কর্ণের পশ্চাতভাগ কর্তিত, অথবা কর্ণ দ্বিখণ্ডিত অথবা কর্ণ ছিদ্রকৃত সে পশু আমরা কুরবানি করব না। (আহমাদ ও সুনান চতুষ্টয় । তিরমিযি ও হাকিম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)। [মুসনাদ আহমাদ, হাদীস-৮৫১; সুনান আবু দাউদ, হাদীস-২৮০৪; সুনান ইবন মাজাহ, হাদীস- ৩১৪২, ৩১৪৩; সুনান নাসায়ি, হাদীস-৪৩৭২; সুনান তিরমিযি, হাদীস-১৪৯৮]

আলেমগণের মতে,বলদ ও খাসি সর্বসম্মতিক্রমে জায়েয। কেননা,এর মধ্যে উপকার রয়েছে। খাসীর গোশত উত্তম হয়। খাসী এবং বলদ পরিশ্রম বেশি সহ্য করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে পশুকে খাসী করার মধ্যে যদি বাস্তবিকই কোন উপকার অথবা ক্ষতিদূরিকরণ উদ্দেশ্য হয় তাহলে সাধারণ ভাবে হালাল। এ মূলনীতির ভিত্তিতে আমাদের উলামায়ে কেরাম ঘোড়াকেও খাসী করা জায়েয বলেছেন। যখন ক্ষতি দূরিকরণ উদ্দেশ্য হয়, যদিও বা কেউ কেউ নিষেধ করে থাকেন। (আহকামে শরীয়ত, ৩য় খন্ড,২৩৬ ও ২৩৭ পৃষ্ঠা)

খাশি কুরবানী সংক্রান্ত সুস্পস্ট হাদীস রয়েছে।জাবির ইবনু ’আব্দুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর দিন দু’টি ধূসর বর্ণের শিংবিশিষ্ট ও খাসী করা দুম্বা যবাহ করেন। তিনি দুম্বা দু’টিকে কিবলাহমুখী করে শুইয়ে বলেনঃ

إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ عَلَى مِلَّةِ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا، وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ، إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ، اللَّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ، وَعَنْ مُحَمَّدٍ وَأُمَّتِهِ بِاسْمِ اللَّهِ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ

অতঃপর তিনি বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে যবাহ করেন। (সুনান আবূ দাউদ ২৭৯৫)

হযরত আয়েশা সিদ্দিকা ও হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোরবানীর ইচ্ছা করতেন তখন দু’টি মোটা তাজা, গোশতযুক্ত, শিং যুক্ত, সাদা কালো মিশ্রিত রঙ্গের ও খাসীকৃত দুম্বা (মেষ) ক্রয় করতেন। অত:পর এর একটি আপন উম্মতের যারা আল্লাহ’র তাওহীদের স্বাক্ষী দেয় এবং তার নবুওয়াতের প্রচারের স্বাক্ষী দেয়, তাদের পক্ষ থেকে এবং অপরটি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তার পরিবার বর্গের পক্ষ থেকে কোরবানী করতেন।(ইবনু মাজাহ) শরীফ

সুতরাং এ নিয়ে কোন সন্দেহ থাকা উচিত নয়।কিছু মানুষের কাজই হলো ইসলামের সহজতাকে ফতোয়ার বেড়াজালে কঠিন ও প্রশ্নবিদ্ধ করা।কয়েক বছর আগে শুনেছিলাম,এতো এতো পশু কুরবানী করা অমানবিক ও হিংস্র আচরণ। তাই কুরবানীর নামে পশু নিধন চলবে না। আর বলদ ও খাসির এই ফতোয়া,কে জানে,তারই আরেকটি সংস্করণ।

লেখকঃ কলাম লেখক এবং সাবেক এডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে লেখক জামান শামস

আরও পড়ুন