Ads

মুমিন হিসেবে দুনিয়ার জীবনকে যেভাবে কাজে লাগাবেন

।। ড. মোহাঃ ইয়ামিন হোসেন ।।

ইসলাম ধর্মের অনুসারী হিসেবে একজন মুমিনের জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুমিন শব্দটি এসেছে ‘ঈমান’ থেকে, যার অর্থ বিশ্বাস। আল-কুরআন ও হাদিসের আলোকে মুমিনের জীবনের উদ্দেশ্য, করণীয় এবং আখলাক (নৈতিকতা) সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। মুমিনের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কীভাবে পরিচালিত হতে পারে তা বোঝার জন্য কুরআন ও হাদিসের দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হলো।

ঈমান ও আমল:

মুমিনের জীবনের মূল ভিত্তি হলো ঈমান, যা আল্লাহর প্রতি অটুট বিশ্বাস, তাঁর নির্দেশাবলির অনুসরণ এবং প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর সুন্নাহ মেনে চলা। আল-কুরআনে বলা হয়েছে:

“নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, আল্লাহ তাদেরকে দয়া করবেন।”(সূরা ত্বহা, আয়াত ৮২)। এখানে ঈমানের সাথে সৎকর্ম করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যা এক মুমিনের জীবনের অপরিহার্য অংশ।

ইবাদত ও আল্লাহর প্রতি আনুগত্য:

মুমিনের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ইবাদত, যা আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত। ইবাদত শুধুমাত্র নামাজ, রোজা, যাকাত ও হজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং জীবনের প্রতিটি কাজই যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয়, তা ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়। আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য এবং নির্ভরতা এক মুমিনের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

আল-কুরআনে বলা হয়েছে: “আমি জ্বিন ও মানুষকে শুধু আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি।” (সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত ৫৬)

এ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, মানুষের সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর ইবাদত করা।

দৈনন্দিন জীবনে সুন্নাহ পালন:

মুমিনের জীবনে নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর সুন্নাহ অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের জীবনের ছোট ছোট কাজেও সুন্নাহ পালন করলে তা ইবাদতের অংশ হয়ে যায়। যেমন, খাবার খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা, ডান হাত দিয়ে খাওয়া, মিসওয়াক করা, ঘুমানোর আগে দুয়া পড়া ইত্যাদি।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আমার সুন্নাহকে ভালোবাসবে, সে আমাকে ভালোবাসে এবং যে আমাকে ভালোবাসবে, সে জান্নাতে আমার সঙ্গে থাকবে।” (তিরমিযী, হাদিস নং ২৬৭৮)

আখলাক বা নৈতিকতা:

মুমিনের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো উত্তম আখলাক বা নৈতিকতা। নবী মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন: “নিশ্চয় আমি উত্তম আখলাক পরিপূর্ণ করার জন্য প্রেরিত হয়েছি।” (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস নং ৮৯৩৯) আখলাকের মধ্যে রয়েছে সততা, ধৈর্য, কৃতজ্ঞতা, দয়া, ক্ষমাশীলতা ইত্যাদি। মুমিনের আখলাক এমন হওয়া উচিত যা অন্যদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে ওঠে।

সমাজে মুমিনের ভূমিকা:

মুমিনের জীবন শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ইবাদত ও নৈতিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং সমাজের কল্যাণে অবদান রাখাও এক মুমিনের কর্তব্য।

আল্লাহ বলেন: “তোমরা সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১১০) ।

এখানে মানবজাতির কল্যাণে কাজ করার জন্য মুমিনদের উৎসাহিত করা হয়েছে। মুমিনকে সমাজের ন্যায়, শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য কাজ করতে হবে।

ইলম বা জ্ঞানার্জন:

জ্ঞানার্জন করা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। আল্লাহ বলেন: “পড়ো তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা আলাক, আয়াত ১) । ইলমের মাধ্যমে মুমিন নিজেকে এবং সমাজকে আলোকিত করতে পারে। ইলমের চর্চা একজন মুমিনের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা:

মুমিনের জীবনে ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতার গুরুত্ব অপরিসীম। কুরআনে আল্লাহ বলেন: “হে ঈমানদারগণ! ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।” (সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত ১৫৩)

আল্লাহর দেওয়া প্রতিটি নিয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞ হওয়া একজন মুমিনের কর্তব্য।

আখিরাতের প্রস্তুতি:

মুমিনের জীবনের সর্বশেষ লক্ষ্য হলো আখিরাতের প্রস্তুতি নেওয়া। কুরআনে আল্লাহ বলেন: “যে ব্যক্তি আখিরাতের শস্য কামনা করে, আমি তার শস্য বৃদ্ধি করে দেই এবং যে দুনিয়ার শস্য কামনা করে, তাকে আমি তা থেকে কিছু দেই।” (সূরা শুরা, আয়াত ২০)। মুমিনের জীবনের প্রতিটি কাজই হওয়া উচিত আখিরাতের প্রস্তুতির জন্য।

পরিশেষে, মুমিন হিসেবে জীবনকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হলে আল্লাহর নির্দেশনা এবং নবী মুহাম্মাদ (সা.) এর সুন্নাহ অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে। ইবাদত, আমল, আখলাক, জ্ঞানার্জন, সমাজকল্যাণ এবং আখিরাতের প্রস্তুতি একজন মুমিনের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ দিক। আল্লাহ আমাদের সবাইকে একজন প্রকৃত মুমিন হিসেবে জীবনযাপন করার তৌফিক দান করুন। আমিন ইয়া রব্বুল আলামীন!

লেখকঃ প্রাবন্ধিক এবং অধ্যাপক, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে লেখক  মোঃ ইয়ামিন হোসেন 

আরও পড়ুন