Ads

সাহিত্য চর্চার উদ্দেশ্য কি

।। আসাদ বিন হাফিজ ।।

সাহিত্য চর্চার উদ্দেশ্য কি কেবল বড় সাহিত্যিক হওয়া? মানুষের প্রশংসা লাভ করা? নিজের আত্মতৃপ্তি লাভ? না, আরো বড় কোন উদ্দেশ্যের জন্য লেখকরা নিবেদিত, তা আমাদের ভেবে দেখতে হবে।

আল্লামা ইকবাল বলেছেন, ‘কবিরা হচ্ছেন বাগানের মুক্ত পাখি, জাতির চক্ষু ও সমাজের দর্পণ।’ আপনি যদি সমাজের চক্ষু হন তাহলে সমাজের সব ভাল মন্দই আপনাকে দেখতে হবে এবং আপনার সন্তান যেন একটি সুন্দর পৃথিবী পায় সে দিকনির্দশনাও আপনাকে দিতে হবে। একজন দায়িত্ববান পিতার মতই হতে হবে আপনার ভূমিকা। সমাজ যেন বিপথে না যায় সেটাও আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে।

উদ্দেশ্যহীন ভাবে আমরা চলতে পারি না। উদ্দেশ্যহীনভাবে চলে পাগল। আমরা তো পাগল নই, বরং আমরা সমাজের পথ প্রদর্শক। লেখালেখির উদ্দেশ্য, আমার লেখায় যেন সমাজ গাইড পায়, তারা যেন সুন্দর সমাজ গড়ে তুলতে পারে। তাই লেখার আগেই আমাদের টার্গেট নির্ধারণ করা জরুরী। কেবল প্রেয়সীর ঠোঁটের বর্ণনা দেয়া লেখকের কাজ হতে পারে না। তার আরো অনেক কাজ আছে। ঘরের দরজা বন্ধ করে যে গোপন কর্ম মানুষ করে তা প্রকাশ্যে নিয়ে আসতে পারে উদ্দেশ্যহীন নির্লজ্জ লেখক। বিবেকবোধ সম্পন্ন কোন মানুষ তা করতে পারে না। তাহলে আমার লেখার উদ্দেশ্য কি, লেখার আগেই তা নির্ধারণ করে নিতে হবে। এই উদ্দেশ্য নিরূপনের ওপর নির্ভর করবে লেখকের মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব। পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত কোন লেখক উদ্দেশ্য নির্ধারণ না করে শ্রেষ্ঠ লেখক হতে পারেনি। আপনি যদি পৃথিবীকে কিছু দিতে চান তবে আপনাকে অবশ্যই আপনার লেখার মটো ঠিক করে নিতে হবে। টার্গেট পয়েন্ট ঠিক করে গুলি চালাতে হবে। সেটা আপনি পাখি শিকার, বাঘ শিকার বা যুদ্ধ ক্ষেত্র যেখানেই হোক না কেন। তেমনি লেখার ক্ষেত্রে আপনার উদ্দেশ্য কি সমাজ বিনির্মাণ, দ্বীন প্রচার, নাকি ব্যক্তির খেয়ালীপনা তুলে ধরা তা নির্ধারণ করা আবশ্যক।

আরও পড়ুন-ইমাম বুখারী, এক চোর এবং এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা

আপনার লেখার উদ্দেশ্য নির্ধারণের আগে কয়েকটি বিষয় আপনাকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে।

ক. আমরা যারা সাহিত্যের ময়দানে কাজ করছি,আমাদের প্রথমেই জানতে হবে কেন আমরা লিখছি? আমাদের টার্গেট কি?

আমরা যারা মুসলমান, আমাদের মানতেই হবে আমরা এক আল্লাহর বান্দা। আমরা তাঁরই দাস, তাঁরই গোলাম। তাঁর হুকুম মানা আমাদের জন্য ফরজ। তামাম পৃথিবীর তিনি স্রষ্টা। তিনি আমাদের দয়া করে তাঁর খলিফা বানিয়েছেন। মানে এ দুনিয়ায় আমরা আল্লাহর প্রতিনিধি। তাঁর সৃষ্টিজগত দেখভাল করার দায়িত্ব আমাদের। দুনিয়ার মানুষের সুখ শান্তির আমরা জিম্মাদার। তিনিই আমাদের এ দায়িত্ব দিয়েছেন এবং তিনিই এ অঙ্গনে কাজ করার যোগ্যতা আমাকে দান করেছেন। সে যোগ্যতার শুকরিয়া আদায় করা আমাদের দায়িত্ব। তাই বিশ্ব মানবতার কল্যাণের জন্য আমরা লিখছি। আমাদের প্রথম টার্গেট বিশ্ব মানবতার কল্যাণ করা।

আমার লেখা কেবল আমার দেশের লোকই পড়বে না, আমার ধর্মের লোকই পড়বে না, আমার সময়ের লোকই পড়বে না। আমার লেখা বেঁচে থাকবে বহু যুগ। অনাদি কালের মানুষও আমার লেখা পড়ে যেনে তৃপ্তি পায় সে দিকে আমার খেয়াল রাখতে হবে।

খ. আমরা বিশ্বাস করি, দুনিয়ার সমস্ত মানুষ আদমের সন্তান। সে হিসাবে দুনিয়ার সব মানুষই আমাদের ভাই। এই বোধ সবার মধ্যে জাগ্রত করাও আমাদের দায়িত্ব। আমাদের কাজ মানুষকে প্রশান্তিতে রাখা। তাদেরকে আনন্দ দান করা। কোন বিশেষ গোষ্ঠী, দল বা সম্প্রদায়ের জন্য আমার লেখা নয়। আমার লেখা সত্যের জন্য, সুন্দরের জন্য, কল্যাণের জন্য। ন্যায়ের স্বপক্ষে আমার লেখা ঢাল হিসাবে ব্যবহৃত হবে।

গ. আমাদের প্রিয় নবীজি ছিলেন রাহমাতুল্লিল আলামীন, বিশ্ব জগতের রহমত। তিনি দয়ার নবী, প্রেমের নবী। যে কারণে তিনি তার শত্রু, বিধর্মী বুড়িকে সেবা দিয়ে ভাল করে তুলেছিলেন। অর্থাৎ মানুষকে ভালবাসতে হবে জাতপাতের উর্ধে উঠে। শত্রুমিত্র ভেদাভেদ ভুলে।

কিন্তু বর্তমান পৃথিবী এর বিপরীতে চলছে। আমাদের আলেমরা আমাদের শিখিয়েছেন, বিধর্মীকে ঘৃণা করতে হবে। এটা ইসলাম বিরোধী একটি চেতনা। যারা এ দেশে ইসলাম প্রচার করেছেন তারা এ চেতনার ধারক ছিলেন না। কিন্তু কালের বিবর্তনে এক শ্রেণীর মানুষ ইসলামকে বিকৃত করে এ ধারনার জন্ম দেয়।

ভালবাসা হবে সার্বজনীন। কিন্তু এ সার্বজনীন ভালবাসার মানে এ নয়, অন্যের বউকে আমি নিজের বউ বলে দাবী করবো। অন্যের বাপকে নিজের বাপ ডাকবো। সার্বজনীন ভালবাসা হচ্ছে, সবার সাথে আমি সদাচরণ করবো। শ্রদ্ধা, শালীনতা বজায় রাখবো। সবাইকে সম্মান করবো।

আমি যেমন আমার সম্পদের উত্তাধিকারী সবাইকে বানাই না, তেমনি অধিকারেরও সীমারেখা আছে। এসব বিষয় কোরানে বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। আর কোরান মোতাবেক চলা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

আরও পড়ুন-চুপচাপ থাকতে অনেক পরিপক্বতা ও বুদ্ধি লাগে

ফলে, প্রেম ও ভালবাসায় পূর্ণ একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার দায়িত্ব পালনের জন্যই আমরা এ ময়দানে কাজ করছি। আমরা লিখছি, গাইছি, আঁকছি। এই উদারতা না থাকলে কখনো বড় লেখক হওয়া যায় না। তবে অবশ্যই সীমারেখা মেনটেইন করতে হবে।

আমাদের সমাজে ইসলামের যে বিকৃত বিশ্বাসকে বদ্ধমূল করে দেয়া হয়েছে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের। বের করে আনতে হবে পুরো জাতিকে।

এ এক কঠিন দায়িত্ব। কোরআন ও হাদীস হবে মুসলমানিত্ব রক্ষার মূল রক্ষাকবচ। এর বাইরে বুজুর্গানে দ্বীনের নামে যা চলে তা যতোই ভালো হোক, ইসলাম নয়। এইসব বিকৃত আকিদা পাল্টে দেয়ার দায়িত্বও আমাদেরকেই নিতে হবে।

কোরআন যতটুকু আবেগ প্রকাশের অনুমতি দেয় এর বাইরে গেলেই আপনি আমি শয়তানের খপ্পড়ে পড়বো। আমরা তাই লিখবো, তাই গাইবো, যা কোরআন অনুমোদন করে। এতেই মানবতার প্রকৃত কল্যাণ নিহীত। মানুষের কল্যাণের জন্যই কোরআন নাজিল হয়েছে।

কোরআন বলছে, মন্দ কাজ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে রাখা ও ভাল কাজের আদেশ দেয়া আমাদের দায়িত্ব। আমাদের লেখায়, গানে, সকল কাজে সুন্দরের এ প্রকাশ ঘটাতে হবে। আল্লাহর পৃথিবীর বাইরে কোন সৌন্দর্য নেই। মানুষ ভালো কাজ করার জন্যই জন্মগ্রহণ করে। মন্দ না থাকলে পৃথিবীতে কোন অসুখ থাকবে না। ভাল কাজ করার জন্য তখন বলতে হবে না কাউকে, এটাই বাস্তবতা।

এগুলো কোন ওয়াজ নয়, পৃথিবীকে সুন্দর করার এটাই একমাত্র রূপরেখা। এ রূপরেখা তুলে ধরতে হবে নিজের লেখায়। এ রূপরেখা নিজের জীবনে প্রকাশ ঘটাতে হবে।

রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করবেন শোভন প্রক্রিয়ায়, সমাজ কর্মীরা সমাজ পরিবর্তন করবেন। আমরা আওয়াজ তুলবো সততার পক্ষে। মুয়াজ্জিন যেমন সবাইকে ডাকে কল্যাণের দিকে আসতে, আমরাও তেমনি মানুষকে শোনাবো মন্দ ছেড়ে ভালোকে গ্রহণ করার গান। আমরা মানুষকে শোনাবো ভোরের আজান।

লেখকঃ কবি, সাহিত্যিক এবং শিক্ষক

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা,গল্প,কবিতা পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক!  আপনি আপনার  পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন,“তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) ।আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

আরও পড়ুন