Ads

সন্তানকে মুমিন হিসেবে গড়ে তুলতে করণীয়

।। ড. মোহাঃ ইয়ামিন হোসেন ।।

ইসলামে সন্তানদের সঠিক পথে পরিচালিত করা এবং তাদেরকে প্রকৃত মুমিন মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল-কোরআন ও হাদিসে এই বিষয়ে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এখানে বিভিন্ন দিক থেকে আলোচনা করা হলো কীভাবে সন্তানদের ইসলামের প্রকৃত আদর্শে গড়ে তোলা যায়।

১. তাওহিদের বোধ জাগানো

আল-কোরআনের নির্দেশনা:

আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমার প্রভু স্থির করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করবে না এবং পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে।” (সূরা আল-ইসরা: ২৩)

হাদিসের নির্দেশনা:

হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেন, “তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে প্রথম শিক্ষা দাও, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’” (মুসনাদে আহমদ)

তাওহিদ তথা আল্লাহর একত্বের বোধ সন্তানের মধ্যে শৈশব থেকেই জাগ্রত করা উচিত। আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস এবং তাকওয়া (খোদাভীতি) সন্তানের চিন্তা-চেতনায় বদ্ধমূল করতে হবে।

২. নামাজের গুরুত্ব বোঝানো

আল-কোরআনের নির্দেশনা:

আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমার পরিবারকে নামাযের নির্দেশ দাও এবং তুমি নিজেও তা পালনে দৃঢ় থাক।” (সূরা তোহা: ১৩২)

হাদিসের নির্দেশনা:

রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, “সাত বছর বয়সে সন্তানদের নামাজের নির্দেশ দাও এবং দশ বছর বয়সে তা না পড়লে শাসন করো।” (আবু দাউদ)

সন্তানের মধ্যে নামাজের গুরুত্ব শৈশব থেকেই স্থাপন করতে হবে। নিয়মিত নামাজ আদায়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং তারা যেন নিয়মিত নামাজ আদায় করে তা নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন-আপনার শিশুর আপনিই শিক্ষক

৩. পবিত্র কুরআন শিক্ষা অধ্যয়নে উৎসাহ প্রদান

আল-কোরআনের নির্দেশনা:

আল্লাহ তাআলা বলেন, “এই কিতাব যা আমি তোমার প্রতি ওহী করেছি, তা খুবই বরকতময়, যাতে তারা তার আয়াতসমূহ অনুধাবন করে এবং বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা উপদেশ গ্রহণ করে।” (সূরা সাদ: ২৯)

হাদিসের নির্দেশনা:

রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম যে কুরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।” (বুখারী)

সন্তানের মধ্যে কুরআন শিক্ষা ও অধ্যয়নকে উৎসাহিত করতে হবে। কুরআনের অর্থ ও মর্মবাণী বোঝানোর জন্য তাদেরকে তাফসীর ও অন্যান্য ইসলামিক বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

৪. নৈতিকতা ও আদর্শের শিক্ষা দেয়া

আল-কোরআনের নির্দেশনা:

আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমরা যে ভাল কাজই করবে, আল্লাহ তা জানেন।” (সূরা বাকারা: ১৯৭)

হাদিসের নির্দেশনা:

রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, “মুমিনদের মধ্যে তাদের ঈমান সবচেয়ে উত্তম, যাদের চরিত্র ও আচরণ সবচেয়ে উত্তম।” (তিরমিজি)

সন্তানদেরকে নৈতিকতা, সততা, সদাচরণ, সহানুভূতি ও মানবিক গুণাবলির মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে। তাদের মধ্যে উত্তম চরিত্র ও আচার-ব্যবহার গড়ে তোলার জন্য অভিভাবকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।

৫. ইসলামী জ্ঞানার্জন ও শিক্ষা গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণ

আল-কোরআনের নির্দেশনা:

আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমরা যারা বিশ্বাস করেছ, তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে রক্ষা করো।” (সূরা তাহরীম: ৬)

হাদিসের নির্দেশনা:

রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, “জ্ঞানার্জন প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ফরজ।” (ইবনে মাজাহ)

সন্তানদেরকে ইসলামী জ্ঞান ও শিক্ষা প্রদান করা অত্যন্ত জরুরি। তাদের মধ্যে কুরআন, হাদিস, ফিকহ ও সিরাত সম্পর্কিত জ্ঞানার্জনের ইচ্ছা সৃষ্টি করতে হবে। ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা এবং অভিজ্ঞ আলেমদের সাথে পরিচিত করানো যেতে পারে।

আরও পড়ুন-সন্তানের সাথে কথা বলার অভ্যাস গড়বেন যেভাবে

৬. হালাল ও হারাম সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি

আল-কোরআনের নির্দেশনা:

আল্লাহ তাআলা বলেন, “হে মুমিনগণ, আমি তোমাদেরকে যে পবিত্র রুযী দিয়েছি তা ভক্ষণ কর এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, যদি তোমরা কেবল তাঁকেই উপাসনা করে থাক।” (সূরা বাকারা: ১৭২)

হাদিসের নির্দেশনা:

রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র জিনিসই গ্রহণ করেন।” (মুসলিম)

সন্তানদেরকে হালাল ও হারাম খাদ্য ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সচেতন করা জরুরি। তাদেরকে হালাল পথে জীবনযাপন ও উপার্জনের গুরুত্ব বোঝাতে হবে।

৭. দোয়ার গুরুত্ব বুঝানো

আল-কোরআনের নির্দেশনা:

আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাক কবুল করবো।” (সূরা গাফির: ৬০)

হাদিসের নির্দেশনা:

রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, “দোয়া ইবাদতের মগজ।” (তিরমিজি)

সন্তানের মধ্যে দোয়া করার অভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। তাদেরকে নিয়মিত দোয়া করার গুরুত্ব বোঝাতে হবে এবং কোন কোন সময়ে ও পরিস্থিতিতে দোয়া করতে হবে তা শেখাতে হবে।

৮. পিতামাতার দায়িত্ব ও উদাহরণ

আল-কোরআনের নির্দেশনা:

আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমরা তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে রক্ষা করো।” (সূরা তাহরীম: ৬)

হাদিসের নির্দেশনা:

রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, “তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমরা প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জবাবদিহি করবে।” (বুখারী ও মুসলিম)

পিতামাতার আচরণ ও কার্যকলাপ সন্তানের জন্য সবচেয়ে বড় উদাহরণ। পিতামাতাকে ইসলামী জীবনযাপনের প্রতিটি দিক মেনে চলতে হবে এবং সন্তানের সামনে উত্তম উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে।

উপসংহার

সন্তানকে প্রকৃত মুমিন মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলা প্রতিটি মুসলিম পিতামাতার প্রধান দায়িত্ব। আল-কোরআন ও হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী সন্তানদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করা এবং তাদের মধ্যে ইসলামের আদর্শ ও নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। তাওহিদ, নামাজ, কুরআন শিক্ষা, নৈতিকতা, ইসলামী জ্ঞানার্জন, হালাল ও হারাম সম্পর্কে সচেতনতা, দোয়া এবং পিতামাতার দায়িত্বের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে সন্তানকে প্রকৃত মুমিন মুসলিম হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। আল্লাহ আমাদের সকলকে এই মহৎ কাজে সফলতা দান করুন। আমিন ইয়া রব্বুল আলামীন!

লেখকঃ প্রাবন্ধিক এবং অধ্যাপক, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে লেখক  মোঃ ইয়ামিন হোসেন 

আরও পড়ুন