Ads

বাংলাদেশ বোটানিক্যাল সোসাইটির পরিবেশ বিষয়ক ওয়েবিনার

।। শারমিন আকতার ।।

বাংলাদেশ বোটানিক্যাল সোসাইটি (এডহক কমিটি)  বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও বিশ্ব মরুকরণ দিবসের প্রতিপাদ্যকে জাতীয় ও বৈশ্বিকভাবে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় একটি ওয়েবনিয়ার আয়োজন করে। গত ২৯ জুন শনিবার সন্ধ্যা ৭:৩০ এ শুরু হয় এবং শেষ হয়  ১০:৩০ এ ।  প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী এই ওয়েবিনারে তথা অনলাইন সেমিনারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয় । অনলাইন সেমিনারে বক্তব্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে অধিকাংশ বক্তা ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করলেও কেউ কেউ বাংলায় তাদের মতামত উপস্থাপন করেছেন। ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডঃ রাখ হরি সরকার ।

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডঃ আবুল খায়ের । বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক শিক্ষা সচিব জনাব মোঃ নজরুল ইসলাম খান এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেসের এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডঃ অনিল চন্দ্র বসাক ।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি  প্রফেসর ড. আবুল খায়ের গাছকে কেন্দ্র করে মানুষ,প্রাণী ও পাখির খাদ্য, জীবন,আবাসন বিষয়টি বিবেচনায় এনে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে বেশী করে গাছ লাগানো ও তার পরির্চযা বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি পালনের জন্য আহবান জানান। পানির পরিমিত ব্যবহারের বিষয়ে সকলকে সচেতন হতে বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ আবুল খায়ের বলেন, “বরেন্দ্র এলাকায় অনেকে কাজ করছেন, বিশেষ করে ডঃ সাবরিনা নাজ বেশ কাজ করছেন । পরিবেশের বিপর্যয় ঠেকাতে আমাদের বৃক্ষ রোপণ করতে হবে বেশি বেশি । আমি শহুরে এলাকায় থাকি । তারপরও আমি অনেক গাছ রোপণে কাজ করেছি । আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিনাল ও সৌন্দর্য বর্ধনকারী প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার উদ্ভিদ রোপণ করার ব্যবস্থা করেছিলাম । এসব উদ্ভিদের চারা প্রশিকা সরবরাহ করেছিল ।”

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আমাদের যেটুকুই সামর্থ্য থাক না, আমাদের যতটুকু জায়গা বা এলাকা থাক না কেন আমাদের তা নিয়েই কাজ করতে হবে । একজন উদ্ভিদ বিজ্ঞানী হিসাবে আমাদের বেশ সচেতন থাকতে হবে এবং অব্যাহতভাবে কাজ করতে যেতে হবে ।”

প্রধান অতিথি আবুল খায়ের আরও বলেন, “আমাদের আলোচনাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে ।  যারা তরুণ আছে তাদের মতামত নিতে হবে । তারা কি ভাবছে তা আমদের গুরুত্ব দিতে হবে ।”

২৯ জুন অনুষ্ঠিত এই ওয়েবিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ও পরিবেশবিদ ডঃ মোঃ আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী । তার প্রবন্ধের শিরোনাম “Impact of Environmental change on Biodiversity” । ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী জীববৈচিত্র্য হ্রাস ও বিপন্নতার কারণগুলোর মধ্যে  অন্যতম হিসাবে জলবায়ু পরিবর্তন অভিঘাত, মানবসৃষ্ট ব্যাঘাত ও পৃথিবীর ধনী দরিদ্র তথা উন্নত বনাম অনুন্নত বিশ্বের দ্বান্দ্বিক সম্পর্ককে চিহ্নিত করেন। সুন্দরবন নিয়ে তার দীর্ঘ মেয়াদি গবেষণার ফলাফলে তিনি সুস্পষ্টভাবে  বলেন, স্থলজ ও জলজ পরিবেশের ভৌত ও রাসায়নিক গুণাগুণের বিপর্যয়ের কারণে জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হয়েছে, এমন কি বিলুপ্তি ঝুঁকি বাড়ছে কুমিরের মতো প্রাণীর। অসম পানি প্রবাহ ও বন্টনের ফলে দীর্ঘমেয়াদে সুন্দরবনের স্থলজ ও জলজ পরিবেশের লবণাক্ততা বাড়ছে। ফলে কম লবণাক্ততা প্রিয় উদ্ভিদসমূহের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে । তিনি বলেন, “সুন্দরবনের মাটিতে ও পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির জন্য উদ্ভিদ প্রজাতিতে অনেক পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে । সুন্দরবনের নিম্ন লবণাক্ত এলাকায় উচ্চ লবণাক্ততা প্রিয় উদ্ভিদ যেমন Ceriops decandra , Excoecaria agalloca etc এর উপস্থিতি বেড়ে যাচ্ছে । অন্যদিকে নিম্ন লবণাক্ততা প্রিয় উদ্ভিদের উপস্থিতি দিন দিন  কমে যাচ্ছে । লবণাক্ততা বৃদ্ধির জন্য সুন্দরবনে উদ্ভিদ রিজেনেরেশন খুব নিম্ন মাত্রায় হচ্ছে ।”

আরও পড়ুন-

বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় আগ্রহীদের জন্য করণীয়

ইতোমধ্যে এসকল উদ্ভিদের উপর আবাসন ও খাদ্যের জন্য নির্ভরশীল পাখি ( যা বাংলাদেশের মোট পাখির  ৪৬%) ও অন্যান্য প্রাণীর অস্তিত্ব সংকট তৈরী করেছে এবং যার মাত্রা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে ক্রমাগত বায়োডাইভার্সিটিতে তার নেগেটিভ প্রভাব পড়ছে। সুন্দরবনের মাটিতে ও পানিতে লবণাক্ততা অধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য সুন্দরবনের প্রধান উদ্ভিদ যেমন সুন্দরী, গড়ান, গেওয়া একেবারে কমে গেছে ।

ডঃ মোঃ আব্দুল্লাহ হারুন আরও বলেন, “বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উদ্ভিত ও প্রাণী প্রজাতির উপর নানা ধরণের প্রভাব পড়ছে । এর মধ্যে Loss of habitat, changes in sex ratio, change in competitive ability  হচ্ছে অন্যতম । জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছে । ভালনেরাবল অবস্থানে রয়েছে অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী । এমনকি কিছু কিছু জনপ্রিয় প্রাণী এনডেনজারড হয়ে যাচ্ছে । এনডেনজারড প্রাণীর মধ্যে অনেক বিখ্যাত প্রাণী যেমন গরিলা, টাইগার, পোলার বেয়ার রয়েছে । বিশ্ব যদি এই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ঠিক মত পদক্ষেপ না নেয় বা ব্যর্থ হয় তাহলে এই জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বে মহা বিপর্যয় সৃষ্টি করবে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য । ”

ডঃ হারুনের প্রবন্ধ পাঠ শেষে প্রথম আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডঃ মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান খন্দকার । অধ্যাপক মনিরুজ্জামান খন্দকার তার বক্তব্যে বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যের অতীত, বর্তমানকে বিবেচনায় এনে দেশব্যাপী জলজ ও স্থলজ সকল পরিবেশে সমন্বিত দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার গুরুত্ব উল্লেখপূর্বক বলেন যে, তথ্য সংগ্রহে বস্তুনিষ্ঠতা ও ব্যাপকতা থাকলে আমরা জীববৈচিত্র্যের সংকট ও তা উত্তরণের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ফোরামে এ বিষয়ে দাবী তুলতে পারবো।

অধ্যাপক ডঃ মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান খন্দকারের আলোচনা শেষে দ্বিতীয় আলোচক হিসেবে আলোচনা রাখেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক, বাংলাদেশে শীত প্রধান দেশের স্ট্রবেরির প্রবর্তক অধ্যাপক ডঃ মনজুর হোসন । অধ্যাপক ড. মনজুর হোসেন বলেন যে, “আমাদের বাস্তবতা বাংলাদেশ পৃথিবীর ঘনবসতির দেশ এবং মাথাপিছু জমির প্রাপ্যতা জন প্রতি অত্যন্ত কম হওয়ায় খাদ্য, আবাসন, শিল্পায়ন, নগরায়ন, সড়ক নির্মাণের মতো প্রতিটি সিদ্ধান্তের জন্য একটি ঋণাত্মক প্রভাব এদেশের জীববৈচিত্র্যের উপর পড়ে। পরিবেশ দূষণ কমানোসহ, সামষ্টিক অভ্যাস পালটানো এবং দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো ও বর্জনের মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য ঝুঁকি কমানো সম্ভব বলে তিনি মতামত দেন।”

অধ্যাপক মনজুর হোসেন আরও বলেন, “বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বিভিন্ন দেশের যেসব Bilateral River (দ্বিপাক্ষিক নদী) রয়েছে সেসব নদীতে দেশের বাহির থেকে পানি প্রবাহ কমে গেছে বলে আমাদের দেশের নদীতে পানি কমে গেছে । অনেক পরিচিত ছোট নদী অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। হ্যাবিটাট লসের কারণে উদ্ভিদ ও প্রাণীর বিভিন্ন প্রজাতি কমে যাচ্ছে । বায়োডাইভারসিটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে । অনেক প্রজাতি হারিয়ে গেছে। সমুদ্রের পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির সাথে সাথে এসিডিক লেভেল বেড়ে গেছে যা উদ্ভিদ ও প্রাণীর উপর অনেক খারাপ প্রভাব ফেলছে ।

ইকসিস্টেমকে সুন্দরভাবে টিকিয়ে রাখতে গেলে আমাদের নানা ধরণের বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে । যেমন সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে গবেষণা কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে খুলনায় । অনেক কিছু আছে যেগুলো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না । কিন্তু আমরাতো কিছু পদক্ষেপ নিতে পারি পরিবেশের সুরক্ষার জন্য; যেমন আমাদেরকে বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে । আমরা আমাদের দৈনন্দিন কাজে পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে দিতে পারি। এই পলিথিন পরিবেশের অনেক ক্ষতি করে ।”

তিনি আরও বলেন, “পরিবেশে ফেনোলজিক্যাল পরিবর্তন হয়েছে অনেক । ঋতু ও জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবনের প্রাকৃতিক ঘটনাবলীর পরিবর্তনকে ফেনোলজিক্যাল পরিবর্তন বলা হয়ে থাকে । এই বছর রাজশাহী অঞ্চলে আমের উৎপাদন প্রায় ৫০% কম হয়েছে । এর কারণও হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন । আমের মুকুল ভাল মতো হয়নি । জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে মুকুল এসেছে । অথচ এর অনেক আগে আমের মুকুল আসার কথা । ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে রাজশাহীতে বেশ ভাল বৃষ্টি হয় । কিন্তু এই বছর বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আমের মুকুল টিকে নাই । তাই আমের ফলনও ভাল হয় নাই।”

আরও পড়ুন-

কোরআন ও হাদিসের আলোকে গবেষণার গুরুত্ব

তিনি আরও বলেন, “আগে বাংলাদেশে প্রায় ১৬৭ ধরণের উদ্ভিদ ছিল‌, যেগুলোকে শাক হিসাবে ব্যবহার করা হত । কিন্তু প্রকৃতিতে পার্থেনিয়াম নামক এক ধরণের গাছের উপস্থিতির জন্য শাকের প্রজাতিগুলোর সংখ্যা কমে গেছে । বাড়ির আঙ্গিনায় পার্থেনিয়াম গাছ থাকলে সেটা কেটে ফেলা উচিৎ ।”

আনন্দ বাজার পত্রিকায় “বিষ ছড়াচ্ছে পার্থেনিয়াম” নামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালের সুপার চিকিৎসক শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘পার্থেনিয়াম মানুষের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক। এর ফুলের রেণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে পৌঁছতে পারে। যা থেকে শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ, অ্যালার্জি, হাঁপানি হতে পারে।’’ শুধু মানুষ নয়, এর ফলে গবাদি পশু ও ফসলেরও ক্ষতি হয়। গরু-ছাগল এই গাছ খেয়ে ফেললে জ্বর ও বদহজমের সমস্যা দেখা দেয়। কৃষিজমিতে থাকলে ফসলের উৎপাদ‌ন কমিয়ে দেয়। পুড়িয়ে ফেললেও রেণু উড়ে অন্যত্র বিস্তার লাভ করতে পারে।”

আলোচনার এক পর্যায়ে অধ্যাপক ডঃ মনজুর দুঃখের সাথে বলেন, “যারা শাসক, যারা দেশ চালায় তাদের সাথে একাডেমিশিয়ানদের তেমন কোনও যোগাযোগ নেই । অথচ যে কোনও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনিক লোকদের সদিচ্ছা সবচেয়ে বেশি জরুরী । তাদের অংশগ্রহণ ছাড়া আমাদের সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম কার্যকর ও বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণে খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারবে না । জমিদার দর্পণ উপন্যাসের মতো প্রশাসকদের কাছে আমাদের দাবী পৌঁছাবে কিনা না সন্দেহ । তবে বোটানিক্যাল সোসাইটি সরকারের  সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে লিয়াজু করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে প্রকৃতি, পরিবেশ এবং বায়োডাইভার্সিটি রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে পরিবেশ এবং প্রকৃতি সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখতে সমন্বয় সাধন করতে পারে ।

আমাদের আলোচনা যেন শুধু বিভিন্ন গবেষণা প্রকাশনা এবং সেমিনারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থাকে । এর মাধ্যমে প্রশাসক ও শাসক বৃন্দের সাথে যোগাযোগ করে নলেজ ট্রান্সফার করতে পারলে তবেই পরিবেশ রক্ষায় অনেক কাজ হবে বলে আমি আশা করি ।”

অনলাইন সেমিনারের সঞ্চালক, সভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ রাখ হরি সরকার বলেন, “আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে । শুধু আলোচনা করলে হবে না । উদ্ভিদ বিজ্ঞানী হিসাবে দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টা প্রশাসনের কাছে তুলে ধরতে হবে এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে ।” তিনি আরও জানান পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয় নাকি বায়োসেফটি নিয়ে কাজ করছে ।  বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষেও কিছু কাজ হচ্ছে ।

প্রধান আলোচকদের আলোচনা শেষ হলে অন্যান্য গবেষক এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের  শিক্ষকদের জন্য মুক্ত আলোচনার সুযোগ করে দেয়া হয় । অনলাইন এই সেমিনারে হ্যান্ড রেইজ করে অনেকে নিজেদের মতামত উপস্থাপন করেন ।

অনলাইন এই  সেমিনারে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে  প্রায় ১১১ জন উপস্থিত ছিলেন । বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি কলেজের শিক্ষক, বিজ্ঞানী ও গবেষক, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী, গবেষক, বেসরকারী পরিবেশ সংগঠনের প্রতিনিধি,গণমাধ্যমের প্রতিনিধিসহ সার্কভুক্ত দেশসমূহের উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ আয়োজনকে সমৃদ্ধ করে। সবাই অভিমত পেশ না করলেও অনেক জ্ঞানীগুণী মানুষের উপস্থিতিতে মুখরিত ছিল এই সেমিনার ।

আরও পড়ুন-

বিদেশে এমএস বা পিএইচডির জন্য এসওপি লেখার নিয়ম

নেপাল থেকে যুক্ত হয়েছিলেন  ডঃ নারায়ন প্রসাদ গিমিরি । জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে সাথে বায়োডাইভার্সিটির পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে তিনি তার অভিমত পেশ করতে গিয়ে বলেন, “পিরিয়ডিক পরিবর্তন কেন হচ্ছে? কীভাবে হচ্ছে? তা বুঝার জন্য নিয়মিত আমাদের গবেষণা চালানো দরকার ।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আজমল হোসেন ভুঁইয়াও অভিমত পেশ করেন এই সেমিনারে । অধ্যাপক আজমল মূলত জলজ উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা করেন । তিনি বলেন, “ভারত থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানির প্রবাহ না আসার কারণেও আমাদের দেশে বায়োডাইভার্সিটির কম্পোনেন্ট  কমে গেছে ।”

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হাসানুর রহমান জানান, জলবায়ুর পরিবর্তন উত্তরবঙ্গে কি ধরণের প্রভাব ফেলছে এই নিয়ে তারা কাজ করে যাচ্ছেন । তিনি বলেন, “আসলে আমাদের ভাবনাগুলো স্থানান্তর করতে হবে ।  জলবায়ুর পরিবর্তনটা কীভাবে আমাদের পরিবেশে ক্রমাগত পরিবর্তন ঘটিয়ে যাচ্ছে সেটা আমরা চাক্ষুস দেখতে পাচ্ছি । আমাদের চোখের সামনে কীভাবে বিভিন্ন প্রজাতি হারিয়ে যাচ্ছে! জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে ইকোসিস্টেমের পরিবর্তন ঘটছে । এর ফলে ফুড চেইনের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে । জলবায়ুর পরিবর্তন পরিবেশের উপর যে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে তা প্রশাসনের কাছে আমাদের উপস্থাপন করতে হবে।”

দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রোপ ফিজিওলজি ও ইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডঃ শ্রীপতি শিকদার বলেন, “আমরা আমাদের অবস্থান থেকে কি ধরণের কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারি? যেন সেমিনারের জন্য শুধু সেমিনার না হয় । আসলে আমাদের মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে  হবে । আমরা অরগানাইজড ফরমে কিছু রিকোমেন্ডেশন প্রকাশ করতে পারি । সেগুলো মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য সরকারী কর্তৃপক্ষের কাছে দিতে হবে  । আর এমন ওয়েবিনারে সরকারী লেভেলের কোনও লোক থাকা খুব জরুরী । যাদের শোনা দরকার তাদের বেশি শুনতে হবে। তাহলে আমাদের রিকোমেন্ডেশন বাস্তবায়নে তাদের সহযোগিতা পাওয়া যাবে এবং ভাল কাজ হবে । বায়োডাইভার্সিটি সংরক্ষণ, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করতে হবে সব সময় ।”

ইডেন মহিলা কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডঃ ফেরদৌসী নূর বলেন, “অনলাইন সেমিনারে বড় বড় গবেষক ও আকাডেমিশিয়ানদের পাশাপাশি আমাদের ছাত্রদেরও অংশগ্রহণ করানো যেতে পারে । পরিবেশ নিয়ে অনেকের গবেষণার ইচ্ছা থাকে । এই সব সেমিনারে অংশগ্রহণ করলে যাদের গবেষণার ইচ্ছা আছে তারা পরিবেশ নিয়ে গবেষণায় ব্যাপারে আরও  বেশী আগ্রহী হয়ে উঠবে  এবং  গবেষণার বিষয়ে দিক নির্দেশনা পাবে।”

সরাসরি কোনও আলোচনায় অংশগ্রহণ এবং অভিমত পেশ না করলেও অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের পরিচালক এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডঃ সাবরিনা নাজ । শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান বোটানি লিমটেড এর প্রধান গ্রিন মিজানুর রহমানও তার অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি মৌখিকভাবে তার অভিমত উপস্থাপনের পাশাপাশি লিখিত কিছু রিকোমেন্ডেশন দিবেন বলে জানিয়েছেন ।

বিএফআরআই এবং বিসিএসআইআর এর কয়েকজন গবেষকের পাশাপাশি বিসিএসআইআর সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডঃ নজরুল ইসলাম ভুঁইয়াও এই অনলাইন সেমিনারে উপস্থিত  ছিলেন । চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ অনিমেশ বিশ্বাস, জগ্ননাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ মনিরুজ্জামান খন্দকার ও ডঃ আমিনুল ইসলাম খন্দকার, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব বায়ো-সাইন্সের ডিন ডঃ সুব্রত দাস, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ শাহিদুর রহমান, নেত্রকোনা সরকারী কলেজের উপধ্যক্ষ ডঃ বিমল সরকার, রাজশাহী সরকারী সিটি কলেজের শিক্ষক মোঃ আশরাফুল আলম,নওগাঁ সরকারী কলেজের শিক্ষক আবু কাউসার এবং ডঃ জাবেদ হোসেন ছাড়া আরও অনেকে অংশগ্রহণ করেছিলেন এই সেমিনারে । রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের একজন প্রাক্তন ছাত্রী এবং পরিবেশ বিষয়ে পূর্বে অল্প কিছু গবেষণার অভিজ্ঞতা থাকায় আমিও এই অনলাইন সেমিনারে উপস্থিত ছিলাম । অনলাইন এই সেমিনারে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষণার সুপারভাইজর ডঃ সাবরিনা নাজ ম্যাডামের কাছ থেকে  ।

ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারীবৃন্দ ব্যক্তিগত, সামষ্টিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণমূলক কার্যক্রমের ভিত্তিতে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারসহ আগ্রাসী উদ্ভিদের আগ্রাসন প্রতিহত করার জন্য সক্রিয় হওয়ার সময় এখনই বলে কাজ শুরুর প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে প্রস্তাবিত সুপারিশ সমূহ সংকলিত আকারে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে প্রেরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বাংলাদেশ বোটানিক্যাল সোসাইটির এই সেমিনার শুধু সেমিনারে সীমাবদ্ধ না থেকে বৃহত্তর পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ুক । মানুষের মাঝে পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি সরকারের পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে তাদের কার্যকর রিকোমেন্ডেশন উপস্থাপন করে বাস্তবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনকে সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখুক এই প্রত্যাশা করি সব সময় ।

প্রতিবেদকঃ  শারমিন আকতার, সম্পাদক, মহীয়সী

এই বিষয়ে আরও নিউজ পড়ুন চ্যানেল আই অনলাইনে- বাংলাদেশ বোটানিক্যাল সোসাইটির পরিবেশ বিষয়ক ওয়েবিনার

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

আরও পড়ুন