Ads

যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকু কেনা বা বেচার সংস্কৃতি চাই

।। মোঃ শরীফ হোসেন ।।

আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। তাদের কৃপণতা নিয়ে বহু ট্রল আমাদের সমাজে রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে “দাদা খেয়ে এসেছেন নাকি গিয়ে খাবেন?”। এর প্রমাণও রয়েছে অনেক। সেসব বিষয়কে পাস কাটিয়ে আমি আজ আমার প্রতিবেশি দাদাদের পক্ষে।

কলকাতার মার্কেটে আপনি কাটা মাছ কিনতে পারবেন। সেখানে যে কোনও পরিমাণের সবজি আপনি কিনতে পারবেন। বিষয়টা বলা মাত্র এক শ্রেণি হয়তো বলবেন, বুঝেছি তুমি বাবুদরে মত কৃপণ। বিষয়টি শুধু আমার সাথে সম্পর্কিত নয় এবং এটি একটি সামাজিক ব্যধি ! সেটাই মুল আলোচ্য বিষয়।

আপনি ইংল্যান্ডের বাজারে একজন ভোক্তার এই মূহুর্তে একটি শসা দরকার তার বাসায় সালাদ করে খাবে সুতরাং সেই একটি শসা তার ওজন ও গুণগত মান অনুযায়ী কত সেন্ট তা কিনতে পারবে (ছবি সংযুক্ত)। এটাই যৌক্তিক। অনেকে বহু যুক্তি দেখাবেন যে আমাদের দেশে ক্ষুদ্র দোকানদারের পক্ষে এসব খুব ঝামেলা। তারা জেনে রাখুন এখন কিউ আর কোডের মাধ্যমে সহজেই টাকা ট্রান্সফার করা যায় যা একজন ভ্যানের সবজিওয়ালাকে জীবনের একদিনের জন্য ব্যাংকে না গিয়ে ব্যবহার সম্ভব। সেখানে খুচরা টাকার সমস্যা নেই । সমস্যা কোথায়? সমস্যা মানসিকতার। ভারতে তো নিয়মিত হচ্ছে। তাদের অর্থনৈতিক কাঠামোতো আমাদের মতই।

আমি মাছের বাজারে গিয়ে দেখলাম ১০ কেজির পাঙ্গাস মাছ । এতবড় মাছ আমার কেনা দরকার নেই। তাই সেখান হতে আমি কিনতে চাচ্ছি ১ কেজি মাছ । এবার এটা দেখলে আমার স্ত্রীর মাথা গরম। তুমি কি ফকির হয়ে গেছো? ! এমনকি আমার চাইতে আরো খারাপ অবস্থার কারো ৫ টা পিছ লাগতে পারে বা সেটাই তার সামর্থের মধ্য। স্ত্রীর এই খারাপ লাগাটা সামাজিক মূল্যবোধ হতেই এসেছে।

এবার আরও কিছু বাস্তব গল্প বলি। সবটাই সত্য ও জীবন ঘনিষ্ট। বিষয়টি ইদানিং সমস্যা আকারে দেখা দিয়েছে।

১) আমার বাসায় তরকারীতে ধনিয়া পাতা খায় না। ধনিয়া পাতার ব্যবহার হয় চটপটি, হালিম খেতে। আমি দোকানে গেলাম ভাই আমাকে ৫ টাকার ধনিয়া পাতা দেন। সে আমার দিকে তাকিয়ে বললো ৫ টাকার ধনিয়া পাতা কি হয়? আমি বললাম ভাই, আমার তো দুইটা ধনিয়া গাছ হলেই হয়। বাকীটা পচবে, তাতে আমার তো এত দরকার নেই। সে রাগে বিরক্ত হয়ে ১০ টাকার ধনিয়া পাতা দিল। বাস্তবে প্রতিদিন আনি এবং এর পুরোটাই নষ্ট হয়।

আরও পড়ুন- যে কারণে চাকুরীর বাজারে পুরুষের চেয়ে নারীরা পিছিয়ে

২) আমার বাসায় গত ঈদের আগে আমি ছাড়া কেউ নেই। দোকানে গিয়ে বললাম ১০ টাকার কাচা মরিচ দেন। অমনি সে বিরক্ত হয়ে বললো ১০ টাকার কাচা মরিচ হয় না। আমি বললাম, ধরুন ১০ টাকায় ১০ টা হয় আপনি সেটাই দেন। আপনার তো লস নেই। সে বললো বেচি না।

৩) একই ঘটনা শুকনা মরিচের জন্য। আমার বাসায় আমি ছাড়া কেউ শুকনা মরিচ খায় না। সুতরাং আমি ১০ টাকার শুকনা মরিচ কিনতে গেলে দোকানদার বলল ২০ টাকার নিলে নেন না হলে আমি দিব না। বাস্তবে ২০ টাকায় যা পেলাম তার ৪ ভাগের একভাগ আমার দরকার ছিল। আমার মুলত দরকার ছিল ৫ টাকার। সেটা আমি কিনতে পারছি না। দোকানদারে লসের কোনো সুযোগ নেই। বরং সে ইচ্ছা করলে এখন সামান্য কমও দিতে পারে। কিন্তু সে কম চাওয়া মাত্র যে লুক দিবে তার মর্মার্থ ফকিন্নির বাচ্চা।

আমি উচ্চবিত্ত নই। নিম্ন মধ্যবিত্ত। কিন্তু তাই বলে যেটা আমার প্রয়োজন বা যতটুকু প্রয়োজন তা কিনতে পারছি না। এটা কি দ্রব্যের দাম এর সাথে সম্পর্কিত? এটা সে সম্পর্কিত আলোচনা নয়, আমি দ্রব্যমূল্য নিয়েও কথা বলছি না। আমার কথা দু টাকায় ১০ টি কাচা মরিচ হলে আপনি ৮ টি দিন কিন্তু কেন দেওয়া যাবে না। সমস্যা টি কোথায়?

নিজের আত্ম সম্মানের কারণে অনেকেই হয়তো কথাটি বলতে সাহস করে না।

৪) আমার বাসায় আমি ও আমার স্ত্রী ছাড়া কেউ কলা খায় না। এক হালি কলা নিলে আমাদের চলে দুদিন। কলা দুদিনের বেশি সংরক্ষন করাও যায় না। ফলে আমি যখন এক হালি কলা কিনতে যায় বেশিরভাগ দোকানদার চরম বিরক্তি নিয়ে বলে আপনি ওখানে খারাপ মানের যে কলা আছে তা নিলে নেন নাহলে এখানে ডজন বা যা আছে নিতে হবে। আমি বলি আপনার দাম সর্বোচ্চটাই আমি দিব এক হালি দিন, তবুও কিন্ত অনেক সময়ই পায় না।

আরও পড়ুন-সন্তানকে মুমিন হিসেবে গড়ে তুলতে করণীয়

৫) সালাদ হিসেবে আমি প্রচুর টমেটো খেলেও শসার ব্যবহার হয় আমার স্ত্রীর প্রসাধনির জন্যই। কিন্তু সে কাজের কয়টা শসাই বা লাগে? আমি হাফ কেজি শসা কিনলে চার দিনের মাথায় সে শসার গুনাগুন আর থাকে না। কিন্তু ঠিকই ইংল্যান্ডের বাজারে একটি শসাও কিন্তু কেনা যাচ্ছে।

এই সামগ্রিক সমস্যা কি আপনাকে বিব্রত করেছে। যদি বিব্রত করে থাকে তবে জেনে রাখুন এই সামাজিক সমস্যাটা একটি ভয়াবহ রুপ ধারণ করছে। একদিন আমি গরুর গোস্ত কিনছি এক মহিলা হাফ কেজি গোস্ত কিনতে এসেছে সেটার দাম কিন্তু ৪০০/- তবুও বিক্রতা সে মহিলাকে মানহীন মাংশ দিল এবং প্রায় ১০ মিনিট দাড় করিয়ে বিরক্তিও প্রকাশ করলো। বিক্রেতার কিন্তু কোনো লস হয়নি । কিন্তু এই যে সামাজিক সমস্যা তা কি খেয়াল করছেন।

কিছু বিষেয়ের জন্য নীতি সহায়তা, কিছু বিষয়ের জন্য দরকার হয় প্রচারণা, কিছু বিষয়ের জন্য দরকার হয় সামাজিক চাপ। এখানে কি করার দরকার তা নিয়ে চিন্তার সময় এসেছে। রাষ্ট্র, সমাজ নিয়ন্ত্রক, সামাজিক মাধ্যম কিন্তু একটি বড় নেয়ামক।

লেখকঃ ব্যাংকার এবং উন্নয়ন গবেষক

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে লেখক মোঃ শরীফ হোসেন

আরও পড়ুন