।। আরিফুল ইসলাম ।।
উস্তাদ আলী হাম্মুদার লেকচার অবলম্বনে
“তাদের (মা-বাবার) সামনে ভালোবাসার সাথে এবং নম্রভাবে মাথা নত করে দাও…।” [সূরা ইসরা ১৭: ২৪]
-
আবু বকর আল-কাফফাল আশ-শাশী রাহিমাহুল্লাহ বলেন- যেভাবে মা পাখি তার ছানাদেরকে ডানায় আগলে, ডানা দিয়ে যেভাবে কাছে টেনে নেয়, সন্তানও তেমন তার মা-বাবাকে আগলে রাখবে।
-
তাঁর দ্বিতীয় মত হলো- যখন পাখি ডানা মেলে ওড়ে, তখন পাখির ডানা থাকে ছড়ানো। কিন্তু, যখন পাখি নিচে নামে, তখন তার ডানা গুঁটিয়ে নেয়। আমরা বাইরে অন্য কারো সাথে যেভাবেই কথা বলি না কেনো, যখনই আমরা মা-বাবার সাথে কথা বলবো, তখন পাখির অবতরণের মতো ডানা গুঁটিয়ে বিনয়ের সাথে কথা বলবো।
-
আল্লামা ইবনুল আসীর রাহিমাহুল্লাহ বলেন- যখন একটি পাখি ক্লান্ত থাকে, তখন তার ডানা মাটিতে বিছিয়ে দেয়। আমরা যখন আমাদের মা-বাবার সাথে কথা বলবো, আমাদেরকেও তেমন আত্ম-অহংকার, গর্ব, রাগ সবকিছু মাটিতে বিছিয়ে দিতে হবে। বিনয়াবনত হয়ে আমরা তাদের সাথে কথা বলবো।
-
শিহাব উদ্দিন আল-খাফাজী রাহিমাহুল্লাহ বলেন- একটি পাখি যেমন আক্রমণের ভয়ে ভীত হয়ে মাটিতে ডানা মেলে থাকে, মা-বাবার সামনে কথা বলার সময়ও আমাদেরকে এভাবে থাকতে হবে।
“তোমার বাবা আর দশজন মানুষের মতো না।”
-
তারা কোনো নাজায়েজ কাজ করলে, তাদেরকে উপদেশ দেয়া যায়
-
খুবই নম্রভাবে তাদেরকে কোনো উপদেশ দেয়া যায়।”
“ধরুন আমি মায়ের সাথে খেতে বসলাম। মা এমন এক খাবারের দিকে তাকাচ্ছিলেন খাবেন বলে, কিন্তু আমি মায়ের তাকানো দেখতে পেলাম না। আমি কী করলাম? ঐ খাবারটাই খেয়ে ফেললাম। ফলে কী হলো? আমি মায়ের অবাধ্য হয়ে গেলাম!” [আল-বিররুল ওয়ালিদাইন, ইবনুল জাওযী, ৫৬]
-
উসমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু ও
-
হারিসা ইবনে নোমান রাদিয়াল্লাহু আনহু
“ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে আমি আমার মায়ের দিকে চোখ তুলে তাকাইনি।”
“মাকে প্রশ্ন করলে তিনি যদি কিছু মনে করেন!” [আল-বিররুল ওয়ালিদাইন, ইবনুল জাওযী, ৫৫]
“মা-বাবার অবাধ্য হওয়া কথার মাধ্যমে হতে পারে, কাজের মাধ্যমে হতে পারে, এমনকি তাদের প্রতি বাঁকা দৃষ্টিতে তাকানোর মাধ্যমেও হতে পারে।”
“রাতে আমি হাঁটলে আমার ছেলে আমার আগে আগে হাঁটে, যাতে কোনো কিছু আমাকে আক্রমণ করার আগে তাকে আক্রমণ করে। আর দিনে সে আমার প্রতি বিনয়াবনত হয়ে আমার পিছু পিছু হাঁটে। আমি কোনো বাসার নিচতলায় থাকলে আমার ছেলে আমার প্রতি সম্মান দেখিয়ে সে বাসার উপর তলায় যায় না। কারণ, উপর তলায় গেলে আমি থাকবো তার পায়ের নিচে!”
“আমার ভাইয়ের ঐ রাতের নামাজের পরিবর্তে আমি কখনো আমার মায়ের সেবা করার আমল বিনিময় করবো না।”
“আমি হাদীস সংগ্রহের জন্য বাইরে যেতে চাইলাম, কিন্তু আমার মা আমাকে নিষেধ করলেন। আমি তাঁর কথা রাখলাম। এতেই আল্লাহ আমার জ্ঞানে বরকত দান করলেন।” [ইমাম আয-যাহাবী, সিয়ারু আ’লাম আন-নুবালা: ১২/১৪৫]
“আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য মায়ের সাথে সদাচারের চেয়ে উত্তম কোনো কাজ আমার জানা নেই।” [আল-আদাবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারী: ৪]
“হ্যাঁ (পাবেন)।” [সহীহ বুখারী: ১৩৮৮]
-
তাঁদের জন্য দু’আ ও ক্ষমাপ্রার্থনা করা
-
তাঁদের কৃত ওয়াদা পূরণ করা
-
তাঁদের উভয়ের মাধ্যমে যে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে তা রক্ষা করা
-
তাঁদের বন্ধুদের সম্মান করা। [সুনানে আবু দাউদ: ৫১৪২। ইবনুল আরাবী আল-মালিকী বলেন সনদটি ‘হাসান’, আরিদাত আল-আহওয়াধি ৪/৩০৭]
“মায়ের খেদমত করো। কেননা, জান্নাত তাঁর পায়ের নিচে।” [সুনানে আন-নাসাঈ: ৩১০৪]
“জান্নাতের সর্বোত্তম দরজা হচ্ছে বাবা। তুমি ইচ্ছে করলে এটা ভেঙ্গে ফেলতে পারো, ইচ্ছে করলে সেটার রক্ষণাবেক্ষণও করতে পারো।” [জামে আত-তিরমিজি: ১৯০০]
লেখকের আরও লেখা পড়ুন- যিনি ছিলেন দুই খলিফার স্ত্রী