Ads

যে কারণে ইসলামে বন্ধু নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ

।। ড. মোহাঃ ইয়ামিন হোসেন ।।

বন্ধুত্ব মানুষের জীবনে একটি অপরিহার্য অংশ। একজন ভালো বন্ধু জীবনের নানা বাঁকে সহায়ক হয়ে ওঠে, যেমন সঠিক পথনির্দেশনা দেওয়া, কঠিন সময়ে সাহস জোগানো এবং মনের সব কথা শেয়ার করার সুযোগ দেওয়া। বন্ধুত্ব জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং মানবিক সম্পর্কগুলির মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। কোরআন ও হাদিসের আলোকে, বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতা ও বিচক্ষণতার প্রয়োজন রয়েছে, কারণ এক ভালো বন্ধু যেমন জীবনের সাফল্যে ও কল্যাণে সহায়ক হতে পারে, তেমনি একজন খারাপ বন্ধু জীবনকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

ইসলামে বন্ধুত্বের গুরুত্ব ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে, যা দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণের দিকে ইঙ্গিত করে।

কোরআনের আলোকে বন্ধুত্ব

কোরআনে বন্ধুত্বের গুরুত্ব এবং ভালো বন্ধু নির্বাচন সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা উল্লেখ করেছেন,

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।’ (সুরা তাওবা, আয়াত, ১১৯)

এই আয়াতে স্পষ্টভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, মুমিনদের উচিত সত্যবাদী ও সৎ মানুষের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা। সত্যবাদী বন্ধুরা দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ বয়ে আনবে।

হাদিসের আলোকে বন্ধুত্ব

হাদিসেও বন্ধুত্বের ব্যাপারে অনেক উপদেশ দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

“মানুষ তার বন্ধুর ধর্মের উপর থাকে। অতএব, তোমাদের কেউ যেন দেখে যে, কার সাথে সে বন্ধুত্ব করছে।” (আবু দাউদ, তিরমিজি)

এই হাদিসটি থেকে বোঝা যায় যে, একজন ব্যক্তির আচরণ ও চরিত্র তার বন্ধুর প্রভাবের অধীন। সুতরাং, ভালো বন্ধু নির্বাচন করা জরুরি, কারণ খারাপ বন্ধু মানুষের জীবনকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে পারে।

আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে,

“ভালো সঙ্গীর উদাহরণ হলো মিশক বিক্রেতার মতো। যদি তুমি কিছু না কিনো, তার সুগন্ধি তোমার কাছে পৌঁছাবে। আর খারাপ সঙ্গীর উদাহরণ হলো লোহা ফোলানো ব্যক্তির মতো। যদি সে তোমাকে পোড়ানো নাও দিক, তার গন্ধ তুমি অবশ্যই পাবে।” (বুখারি ও মুসলিম)

এই হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায় যে ভালো বন্ধু আমাদের জীবনে সুগন্ধি বা ভালো প্রভাব নিয়ে আসে, আর খারাপ বন্ধু আমাদের উপর খারাপ প্রভাব ফেলে।

আরও পড়ুন-

সন্তানকে মুমিন হিসেবে গড়ে তুলতে করণীয়

দুনিয়ার কল্যাণে বন্ধুত্ব

দুনিয়াতে একজন ভালো বন্ধু পরামর্শদাতা, সহায়ক এবং সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়। একজন সৎ ও ধার্মিক বন্ধু দুনিয়াতে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। সে ভুল পথে গেলে সংশোধন করে এবং ন্যায়ের পথে চলার জন্য উৎসাহ দেয়।

ভালো বন্ধুর প্রভাব দুনিয়ার জীবনে উল্লেখযোগ্য। একজন ভালো বন্ধু জীবনে অনেক প্রভাব ফেলতে পারে যেমন

১। সহায়তা ও সহযোগিতা করে

ভালো বন্ধু দুঃখ-কষ্টের সময়ে পাশে দাঁড়ায় এবং সমস্যার সমাধানে সহায়তা করে।

২। সঠিক পথনির্দেশনা দেয়

বন্ধু যখন ভুল পথে যায়, তখন সঠিক পরামর্শ দিয়ে তাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনে।

৩। নৈতিকতার বিকাশ ঘটায়

সৎ ও নৈতিক বন্ধুদের সাথে মেলামেশা করলে একজন ব্যক্তির নৈতিকতা ও চারিত্রিক গুণাবলী উন্নত হয়।

আখেরাতের কল্যাণে বন্ধুত্ব

আখিরাতে একজন ভালো বন্ধু মানুষের জন্য সুপারিশকারী হতে পারে। হাদিসে বলা হয়েছে:

“কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, কোথায় সেই ব্যক্তি যারা আমার মহব্বতে একে অপরের সঙ্গে মহব্বত করতো? আজ আমি তাদেরকে আমার ছায়া দিব, যখন আমার ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া নেই।” (মুসলিম, হাদিস নং ২৫৬৬)

আরও পড়ুন-

প্রতিদিনের কাজগুলো যেভাবে সাদাকায়ে জারিয়া হবে

আখেরাতের জন্যও ভালো বন্ধুত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন ভালো বন্ধু সঠিক পথে চলতে নানাভাবে সহায়তা করতে পারে । যেমন

১। দ্বীন সম্পর্কে শিক্ষা দেয়

দ্বীন ও ঈমানের ক্ষেত্রে একজন ভালো বন্ধু শিক্ষা ও প্রেরণা দেয়।

২। তাওবার পথে আহ্বান করে

খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে এবং আল্লাহর পথে ফিরে আসতে সাহায্য করে।

৩। নেক আমলের জন্য উদ্বুদ্ধ করে

সালাত, সিয়াম, জাকাত ও অন্যান্য নেক আমলের প্রতি উৎসাহিত করে।

পরিশেষে, ইসলাম ধর্মে বন্ধুত্বকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং ভালো বন্ধু নির্বাচনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ লাভের জন্য আমাদের উচিত সতর্কভাবে বন্ধু নির্বাচন করা এবং তাদের সাথে মেলামেশা করা যারা আমাদের ঈমান ও চরিত্রকে উন্নত করতে সহায়তা করবে।

ভালো বন্ধু আমাদেরকে আখেরাতের জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। তারা আমাদেরকে দীন ও ঈমানের পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করে, যাতে আমরা আখেরাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি। তারা আমাদেরকে দোয়া ও ইবাদতের দিকে উৎসাহিত করে, যা আখেরাতে আমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে।

বন্ধুত্বের গুরুত্ব ও বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতার প্রয়োজনীয়তা আল কোরআন ও হাদিসের আলোকে স্পষ্ট। ভালো বন্ধু আমাদের দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ বয়ে আনে, যা জীবনের এক মূল্যবান দিক। সুতরাং, আল্লাহকে ভয় করে এবং সত্যবাদীদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করে আমরা দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা অর্জন করতে পারি।

লেখকঃ প্রাবন্ধিক এবং অধ্যাপক, ফিশারীজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 

…………………………………………………………………………………………………………………………

মহীয়সীর প্রিয় পাঠক ! সামাজিক পারিবারিক নানা বিষয়ে লেখা আর্টিকেল ,আত্মউন্নয়নমূলক অসাধারণ লেখা, গল্প  ও কবিতা  পড়তে মহীয়সীর ফেসবুক পেজ মহীয়সী / Mohioshi  তে লাইক দিয়ে মহীয়সীর সাথে সংযুক্ত থাকুন। আর হা মহীয়সীর সম্মানিত প্রিয় লেখক! আপনি আপনার পছন্দের লেখা পাঠাতে পারেন আমাদের ই-মেইলে-  [email protected]  ও  [email protected] ; মনে রাখবেন,”জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়েও উত্তম ।” মহীয়সীর লেখক ও পাঠকদের মেলবন্ধনের জন্য রয়েছে  আমাদের ফেসবুক গ্রুপ মহীয়সী লেখক ও পাঠক ফোরাম ; আজই আপনিও যুক্ত হয়ে যান এই গ্রুপে ।  আসুন  ইসলামী মূূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রজন্ম গঠনের মাধ্যমে সুস্থ,সুন্দর পরিবার ও সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখি । আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা সৎ কাজে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এগিয়ে চলো ।” (সূরা বাকারা-১৪৮) । আসুন আমরা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখতে সচেষ্ট হই । আল্লাহ আমাদের সমস্ত নেক আমল কবুল করুন, আমিন ।

ফেসবুকে লেখক  মোঃ ইয়ামিন হোসেন 

আরও পড়ুন